Wednesday, September 20, 2017

রোহিঙ্গা ইস্যুর নেপথ্যে

রোহিঙ্গা ইস্যুর নেপথ্যে

ভাবতে অবাক লাগে যে মায়ানমারে সরকারী হিসেব মতে ১৩৫ টি জনজাতি গোষ্ঠী রয়েছে (এতে রোহিঙ্গারা বাদ পড়েছে ১৯৮২ তে )অথচ বেছে বেছে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন কেন ?ধর্মীয় কারন ?রোহিঙ্গারা সবাই তো মুসলিম নয় ?ধর্মীয় উত্তেজনা একটু আধটু থাকলেও গত একদশকে এর পরিমান এইভাবে বৃদ্ধি পেল কেন ?যতই মিডিয়া  এবং ধর্মকে ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করনেওয়ালারা আমাদের এটাকে ধর্মীয় বিরোধ থেকে উদ্ভুত সমস্যা হিসাবে বোঝাতে চান না কেন সত্য কি আর চাপা থাকে ?

১৯৯০ এর দশক থেকে মায়ানমারের সামরিক জুন্টা ক্ষুদ্র জমির মালিকদের জমি ছিনতাই শুরু করে ।এক্ষেত্রে কোন ক্ষতিপূরণের সংস্থান ও রাখা হয় নি-সে যে জনগোষ্ঠী বা ধর্মেরই হোক না কেন ।যেমন কাচিন প্রদেশে ৫০০ একর জমি দখল করে সামরিক বাহিনী স্বর্ণ খনি খননে সহায়তায় । ২০১১ সালে মায়ানমার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কার আনে এবং মায়ানমারকে “এশিয়ার শেষ সীমান্ত” হিসেবে ঘোষণা দেয় ও বিদেশী পুঁজির জন্যে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে। (অর্থাৎ পূর্বেকার পুঁজি গোষ্ঠী গুলি থেকে নতুন করে বেটে দেয়ার জন্যে)।
আপাতঃ আশ্চর্য হোল এর পর থেকেই রাখাইন প্রদেশে উত্তেজনা বাড়তে থাকে ,২০১২ সালে রোহিঙ্গা নিধন ও বিতারনের এক নির্মম ইতিহাস রচিত হয়।এই ঘটনার বিবরনকারীদের বর্ণনায় স্পষ্ট সরাসরি সামরিক বাহিনী ছিল এই কাজে লিপ্ত ।
যাই হোক মূল কথায় ফিরে যাই । এই যে গণ হত্যা ও বিতরন হোল তার একটা অন্যতম লক্ষ্য ছিল কর্পোরেট দৈত্যদের হাতে ফাঁকা জমি তুলে দেয়া ।উদাহরণস্বরূপ কৃষি বহুজাতিক সংস্থা POSCO DAEWOO এই ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে বাকায়দা চুক্তি করে ঘুসে পড়ে । ৩০শে মার্চ ২০১২ পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশন জমি আইন সংশোধন করেছিল । এতে সমগ্র জমিকে দুভাগে ভাগ করে পৃথক আইন তৈরি করে মায়ানমার সরকার ।প্রথমটি হল কৃষি জমি আইন আর দ্বিতীয়টি হল ফাঁকা জমি আইন (VACANT LAND LAW) একই সঙ্গে নতুন বিদেশী বিনিয়োগ আইন ও পাশ হয় , যাতে ১০০% বিদেশী বিনিয়োগ ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ৭০ বছরের জন্য লীজ নেয়ার অধিকার দেয়া হয়। বিস্ময়ের হলেও সত্য এটাই জমি ফাঁকা করতে শুধু রোহিঙ্গা অঞ্চল নয় উৎখাত চলছে মায়ানমারের অন্য অঞ্চলেও ।জমি ছিনিয়ে নেয়া এতটাই বেড়েছে যে বছরে প্রায় ১০০০০০ একর জমি হারাচ্ছে মায়ানমার (তথ্য- দ্য গার্ডিয়ান )। অন্য জনগোষ্ঠীরাও যে এই কর্পোরেট লুটের শিকার তা্র উদাহরন শান প্রদেশে চিনের কোম্পানি দ্বারা ঐ এলাকার ব্যপক অংশ  যথ বন নদী ও খনিজ সম্পদের দখল নেয়া ।এইসব কারনেই কাচি প্রদেশে কাচি ইন্ডিপেন্ডেন্স গ্রুপ ও সামরিক জুন্টার মধ্যে তুমুল লড়াই ও হয় ।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর এত জুলুম কেন ?

এর জন্যে বুঝতে হবে এই অঞ্চলের ভু-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা। বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় থাকা এই অঞ্চল ভারত ও চিনের  কাছে রণনৈতিক কারনে প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ ।ভারত ইতিমধ্যে রাখাইনের রাজধানী সিত্যু তে তৈরি করছে SITTWE DEEP SEA PORT .উদ্দেশ্য মিজোরামকে বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করা।অন্যদিকে এই অঞ্চলে একটি আন্তর্জাতিক পাইপ লাইন তৈরি করছে চিনের কোম্পানি CNPC( CHINA NATIONAL PETRLIUM COMPANY)এর মাধ্যমে সেই রাখাইনের রাজধানী সিত্যু থেকে চিনের কুন মিং পর্যন্ত যাবে তেল,গ্যস ।আর একটা সমান্তরাল পাইপ লাইন তৈরি হচ্ছে মধ্য প্রাচ্য থেকে চিনের কুয়াকফুয়া বন্দরে তেল নিয়ে যেতে। এত বড় বানিজ্যের জন্য কয়েক লক্ষ জনতাকে বলি চড়িয়ে দিয়ে ফাঁকা করে দিতেই কি এই বিতারন ও হত্যালীলা ?
পুনশ্চঃ-এ যুগ হল সাম্রাজ্যবাদ ও সর্বহারা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের যুগ ।সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্রের লড়াই ই মুক্তি আনতে পারে নিপীড়িত জনতার তা সে রোহিঙ্গাই হোক বা অন্য কোন নিপীড়িত গোষ্ঠী ।ধর্মের নামে নয় ,মানবতার ভিক্ষার নামে নয় সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের বিরুদ্ধে অধিকার এর লড়াইয়েই, তা সে যতই আপাত কঠিন মনে হোক না কেন, লেখা আছে উত্তরনের রাস্তা ।

No comments:

Post a Comment