Thursday, February 23, 2017

প্রতিবাদ হীনতা মানে আত্মিক মৃত্যু - প্রতিবাদ করুন

Thursday, February 23, 2017

যোরহাটের ছাত্রী শুভলক্ষীর প্রতিবাদে সামিল গোটা পূর্বোত্তর ভারতের জনা কয় লেখক, সম্পাদক, ব্লগার, অভিনেতা, শিল্পী, সমাজকর্মী



[ এই প্রতিবাদপত্র যে কোনো ব্লগে জোড়া যাবে। সংবাদ পত্রে ছাপা যাবে। ব্লগপোষ্ট প্রকাশ্যে আসবার পরেও যদি আপনি  স্বাক্ষর করে প্রতিবাদে সামিল হতে চান, ইচ্ছেটি ব্লগে মন্তব্য করে জানান, আমরা আগামী দুই দিন তিন দিন (২৬/২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭) অব্দি আসা সব নাম সম্পাদনা করে মূল পোষ্টে জুড়ে দেব। ]
রা আসে অন্ধকারের সুযোগ নিয়েকখনোবা মাস্ক পরে। বাইক নিয়ে আসেদুরন্ত গতিতে। আমি পথের একেবারে পাশ দিয়ে আসি। ওরা আমার গায়ের কাছে বাইক চাপিয়ে আনে আর আমার বুকে হাত দিয়ে চলে যায়। আমি স্তম্ভিত ...কী গেল এই মাত্র... আমাকে যেন বিছায় ধরেছে। আমি ঘরে চলে আসি।
ওরা আসে অন্ধকারের সুযোগ নিয়েকখনো মাস্ক পরে। আমি পথের একেবারে পাশ দিয়ে চলি। এবারে কলেজের বেগটি আমি পিঠের বদলে বুকে নিয়ে আসি। ওরা আমার গায়ের কাছে বাইক চাপিয়ে আনে আর কোমরের তলার  অংশে খামচে ধরে। কী ঘটল এই মাত্র। আমার গায়ে কাঁটা বিঁধে।
এবারে অন্ধকার হওয়া অব্দি অপেক্ষা নয় আর। চাই কি কাজগুলো আধাই করা হোক। চারটা বাজতেই আবাস ঘরে ফিরি। ওরা আজও এসেছে দুরন্ত গতিতে। আমার কানের কাছে কেউ একজন বলে যায়, ‘তোকে***...তোর***... বড় হওয়া অব্দি***.... আজ আমি ওদের আঁচড়াতে যাই। দুরন্ত গতিতে এরা হাওয়া হয়ে যায়। আজ আমার বমি হয়।
(যোরহাটের ডিসিবি রোডে আমার বাসা। এখান থেকেই আমার যাওয়া আসা। এই পথে আমার সঙ্গে এতো সব শারীরিক মানসিক নির্যাতন হয়েছে যে আমি আর ঘরের থেকে বেরুতে চাইনে। অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। আজ পর্যন্ত চারবার অতি নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটেছে আমার সঙ্গে।কেবলই আমার সঙ্গে নয়এই পথে আসা যাওয়া প্রায় সব মেয়েদের সঙ্গে। সন্ধ্যা ৬টায় কোনো মেয়ে একা  হাঁটে না এই পথে। আমি জানি ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে আমি কিছু করতে পারি না। কিন্তু আজ আমার সঙ্গে যা ঘটেছে তাতে আমি অত্যন্ত অসহায় বোধ করছি। আমার রাগ উঠছে ভীষণভাবে আর অন্যদিকে ভয় হচ্ছেকখনো আমাকে টেনে চিরচির করে ফেলবে না তো????)
[সিহঁত আন্ধাৰৰ সুযোগ লৈ আহেকেতিয়াবা মাস্ক পিন্ধে। বাইক লৈ আহেদুৰন্ত গতিৰে। মই ৰাস্তাৰ একেবাৰে কাষেৰে আহো। সিহঁতে মোৰ গাৰ কাষলৈ বাইক খন চপাই আনে আৰু মোৰ বুকুত হাত দি গুচি যায়। মই থৰ হৈ পৰোঁ..কি হৈ গ'ল এইমাত্ৰ...মোকযেন বিচাই ডাকে। মই ৰুমলৈআহো।
সিহঁত আন্ধাৰৰ সুযোগ লৈ আহেকেতিয়াবা মাস্ক পিন্ধে। মই ৰাস্তাৰ একেবাৰে কাষেৰে আহো। এইবাৰ কলেজৰ বেগটো মই পিঠিৰ সলনি বুকুত লৈ আহো। সিহঁতে মোৰ গাৰ কাষলৈ বাইক খন চপাই আনে আৰু মোৰ ককাঁলৰ তলৰ অংশত খামোচি ধৰে। মই আকৌ মুক হৈ পৰোঁ। কি ঘটিল এইমাত্ৰ। মোক কাঁইটে বিন্ধে।
এইবাৰ মই আন্ধাৰ হোৱালৈ নৰ'ও।লাগিলে কামবোৰ আধৰুৱা হৈ থাকক।৪বজাত ৰুমলৈ ওভটো।মোক ৰক্ষা কৰা!! সিহঁত আজিও আহিছে দুৰন্ত গতিৰে। মোৰ কাণৰ কাষত কোনোবা এটাই কৈ যায় " তোক ***.. তোৰ ** বহল হোৱাৰ লৈকে ***..." আজি মই তাহাঁতক আচুৰিবলৈ যাওঁ। দুৰন্ত গতিৰ সিহঁত নিমিষতে বতাহত হেৰাই। আজি মোৰ বমি হয়।
(যোৰহাটৰ ডিচিবি ৰোডত মোৰ ৰুম। এই ৰুম হয়েই মোৰ আহযাহ। ৰাস্তাটোত মোৰ লগত ইমানেই শাৰীৰিক আৰু মানসিক নিৰ্যাতন হৈছে যে মই ৰুমৰ পৰা ওলাব নোখোজোঁ। অতিষ্ঠ হৈ পৰিছোঁ।আজিৰ লৈকে প্ৰায় ৪বাৰ অতি নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটিছে মোৰ লগত। অকল মোৰ নহয়এই ৰোডেৰে অহা প্ৰায়বোৰ ছোৱালীৰ লগত। সন্ধিয়া ৬বজাত কোনো ছোৱালী অকলে নাহে এইফালে।মই জানো ফেছবুকত পোষ্ট দি মই একো কৰিব নোৱাৰোঁ। কিন্তু আজি মোৰ লগত যি ঘটিল মই খুবেই বেছি অসহায় অনুভৱ কৰিছোঁ। মোৰ খং উঠিছে ভীষণ ভাৱে আৰু আনফালে মোৰ ভয় লাগিছেকেতিয়াবা মোক টানি আজুৰি চিৰাচিৰ কৰি নেপেলাইতো????)]
৮ ফেব্রুয়ারিসন্ধ্যা ৬টা ৪৪মিনিটে এই ছিল যোরহাটের জেবি কলেজের ছাত্রী শুভলক্ষ্মীর লেখা ফেসবুক স্ট্যাটাস।তারপরের বাকিখানা ইতিহাস। ভয়ের সঙ্গে যুদ্ধে শুভলক্ষ্মী শুধু এ যাবত বিজয়ী নয়সে এই প্রদেশের এমন বহু অপমানিতালাঞ্ছিতা তরুণী-কিশোরীর প্রেরণার স্থল। পরদিন থেকেই তাঁর কলেজের শুধু নয় সারা রাজ্যের দিকে দিকে প্রতিবাদের ঢেউ উঠে। ঢেউ উঠে ফেসবুকে হোয়াটস আপেব্লগেওয়েবসাইটে ছাপা এবং বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমেএবং রাজপথে। দলমত নির্বিশেষে ছাত্রদেরসঙ্গে সামিল হন রাজ্যের শিক্ষক বুদ্ধিজীবীরাও। এই অব্দি অপরাধী ধরবার সংবাদ নেই। কিন্তু সে কেন আগে পুলিশকে না জানিয়ে ফেসবুকে জানিয়ে দিল বলে ঘটনাক্রমকে হালকা করে ফেলবার প্রয়াস করেছেন রাজ্যের এক দায়িত্ববান মন্ত্রী। যেন বা ফেসবুকে লেখাতে অপরাধী পালিয়ে গেলপুলিশে সংবাদ দিলে কবেই ধরা যেত। মন্ত্রী যাই বলুনআমরা মনে করি পুলিশ বা প্রশাসন সেরকম আস্থা অর্জন করে নি বলেই একটি নির্যাতিতা মেয়ে জনতাকে জানানো শ্রেয় মনে করেছে। আর জনতা প্রতিবাদী হয়েছে বলেইমন্ত্রীও কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন অন্যথাএমন হাজারো ঘটনা যা নিত্য ঘটে বলে  শুভলক্ষ্মীও ইঙ্গিত দিয়েছেসে গুলোর মতই এও চাপা পড়ে যেত। শুভলক্ষ্মী একটি ছাত্র সংগঠনের প্রাথমিক সদস্যা। সেই সংগঠন প্রতিবাদে সরব হলে সে সেখানেও যোগ দেয়। সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সেই মন্ত্রী। বুঝিবা নির্যাতিতা মেয়ের কোনো ছাত্র সংগঠন করা উচিতই নয়। অথচওর ফেসবুক স্ট্যাটাসের যে প্রত্যয় দীপ্ত এবং কাব্যিক ভাষা আমরা পড়ে এলাম এক সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ সংগ্রামী চেতনা সম্পন্ন তরুণীই শুধু এভাবে লিখতে এবং বলতে পারে। প্রেরণার অমল স্রোত হতে পারে অসংখ্য মূক মেয়েদের। আর এ শুধু সম্ভাবনা নয়সেটাই এই মুহূর্তে এই রাজ্যে বাস্তব। তাই প্রশাসনও নড়ে চড়ে একেবারে বসে নি তাই নয়যোরহাট শহরে পথের পাশে আলো বাড়ানো হয়েছেপুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। এবং বহু কলেজেGender Sensitisation Committee Against Sexual Harassment (GSCASH) স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু এই যথেষ্ট নয় বলে আমরা আসাম ত্রিপুরা সহ গোটা পূর্বোত্তর ভারতের লেখক, সম্পাদক, ব্লগার, অভিনেতা, শিল্পী, সমাজকর্মী নিম্ন-স্বাক্ষরকারীরা মনে করি। শুভলক্ষ্মী তাঁর পাশে দাঁড়ানো অসংখ্য সহযোদ্ধাদের অভিনন্দন জানিয়ে দুটি দাবি উত্থাপন করেছে। আমরা সে দুটি সমর্থন জানাচ্ছি:


১) সত্যকার অর্থে পুলিশের একটি হেল্প-লাইন নম্বর চালু করা উচিত।
২) প্রতিটি কলেজে   Gender Sensitisation Committee Against Sexual Harassment (GSCASH) স্থাপন করা উচিত।
সেই সঙ্গে আমাদের সংযোজনঃ 
৩) এরকম নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে অন লাইনে অভিযোগ জানানোর বিশেষ ব্যবস্থা হোক এবং/অথবা নির্যাতনের বিষয়ে যে কোনো মাধ্যমে দেওয়া বয়ান এফ আই আর হিসেবে গণ্য করা হোক।
৪) সেই সঙ্গে আমরা রাজ্য সরকারের দায়িত্ববান মন্ত্রীর এমন লঘু মন্তব্যের নিন্দে জানাই 
এবং অচিরে শুভলক্ষ্মীর অপরাধীদের গ্রেপ্তার করবার দাবি জানাই।
                     ইতি
১) সীতানাথ লহকর                                                           ২) মৃন্ময় দেব
৩) শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার                                                  ৪)কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য
৫) মলয় কান্তি দে                                                               ৬) শ্যামল ভট্টাচার্য
৭) আবু হোসেইন                                                               ৮ ) অরূপ বৈশ্য
৯) অবনী কুমার সূত্রধর                                                       ১০)  কিরণ শঙ্কর
১১) বিশ্বজিৎ দাস                                                              ১২) বাসব রায়
১৩) সন্দীপন ভট্টাচার্য                                                          ১৪)শিবাশিস চ্যাটার্জি 
১৫)  মুজিব স্বদেশি                                                             ১৬) ড্: মনিরুল হোসেইন
১৭) শিশির দে                                                                   ১৮) আশু পাল
১৯) রাজেশ শর্মা                                                                ২০) উজ্জ্বল  ভৌমিক
২১) সুদীপ নাথ                                                                   ২২) দেবলীনা সেনগুপ্ত
২৩) চিরশ্রী দেবনাথ                                                             ২৪) কপোতাক্ষী ব্রহ্মচারী চক্রবর্তী
২৫) রঞ্জনকান্তি ভট্টাচার্য                                                       ২৬) রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ
২৭) নিরূপম শর্মা চৌধুরী                                                     ২৮) পারিজাত এন ঘোষ
২৯) ফজলুল করিম (ফোরাম ফর সোসাল হারমনি)                     ৩০) কৃষানু ভট্টাচার্য (ফো. ফ. সো. হারমনি)
৩১)  মনোজিৎ দত্ত                                                             ৩২) জ্যোতিষ কুমার দেব
৩১)  শিবানী দে                                                                ৩৪) শৈলেন দাস
৩৩)  সাগরিকা সেন                                                           ৩৬) ধ্রূবজ্যোতি মজুমদার
৩৫) অর্জুন দাস                                                                ৩৮) শুভ্রব্রত চৌধুরী
৩৭) তমোজিৎ সাহা                                                            ৪০) এ এফ ইকবাল
৪১) রাজীব ভট্টাচার্য                                                           ৪২) মধুমিতা সেনগুপ্ত
৪৩)  মানব রতন মুখোপাধ্যায়                                               ৪৪) সন্দীপ দাস
৪৫) বিজয় ঘোষ                                                                ৪৫) সুমনা চৌধুরী
৪৬) ডক্টর পিঙ্কি পুরকায়স্থ                                                    ৪৭) মাশুরুল বারি
৪৮) পদ্মাক্ষ এন বি যিশু                                                        ৪৯)  আশফাক হাবিব চৌধুরী
৫০) সুশান্ত কর                                                                  ৫১) রাজ চক্রবর্তী
৫২) এম রিয়াজুল আজহার লস্কর।                                          ৫৩) বিদ্যুত সাগর
৫৪) তাফি মুখার্জি                                                                ৫৫) প্রীতিভাজন ব্যক্।।
৫৬) শৈবাল কান্তি দাস।                                                          ৫৭) মুহম্মদ কবীর স্বপ্নীল
৫৮) নীলাক্ষ কে চৌধুরী                                                          ৫৯) অলক বিশ্বাস 
৬০) রাহুল চৌধুরী



~~~~~~~~~~~~০০০০~~~~~~~~~~~

(এই প্রতিবাদপত্রটি স্বাধীন ভাবে  ঈশানের পুঞ্জমেঘ ফেসবুক গ্রুপের কিছু সদস্য শুরু করেন। এবং ক্রমে ক্রমে এই ফেসবুক গ্রুপের ভেতরের এবং বাইরেরও কিছু ব্যক্তি এসে পাশে দাঁড়ান। ফেসবুক গ্রুপে তৈরি বলেঈশানের ব্লগেও প্রতিবাদ পত্রটি এল। গ্রূপ কিংবা ব্লগ হিসেবে এই প্রতিবাদ সঙ্গে ঈশানের পুঞ্জমেঘ -একটি বাংলা গোষ্ঠীর সরাসরি কোনো যোগ নেই। এই প্রতিবাদ পত্রের কোনো অভিমত কিংবা বক্তব্য ব্লগ বা গ্রুপের বক্তব্য নয়" ।---মুখ্য সমন্বয়কএডমিন গোষ্ঠীঈশানের পুঞ্জমেঘ)

Tuesday, February 21, 2017

মাতৃ ভাষা দিবসে

।।পার্থ প্রতিম আচার্য।।


প্লাতিনাস সেই কবে বলেছিলেন সৃষ্টির প্রানশক্তি হল শব্দ (তার ভাষায় লোগস)। কিন্তু তিনি ভ্রান্ত ছিলেন । মানুষ ,মানুষ হয়েই কথা বলতে শেখেনি। হাইডেলবার্গ মানুষরা খাদ্যের সন্ধানে বেরুলে পশুর মতই চিৎকার করতো । সে ভাষা সাংকেতিক। শিকার না আসা পর্যন্ত ভাষার উৎপত্তি হয় নি । প্রয়োজনই আবিষ্কারের জননী- এই কথা মাথায় রাখলে বুঝতে অসুবিধা হয়না, ভাষাও প্রয়োজনেই তৈরি হয়েছে মাত্র। যখন শিকারের প্রয়োজনে যৌথ সমাজের উৎপত্তি হোল ,দরকার হোল মানসিক বক্তব্য আদান প্রদানের – তা আগের চেয়ে অনেক বেশি । হাত - পা নাড়া , শারীরিক ভাষায় টান পড়লো – এইসব ক্রমশ বাতিল হতে লাগলো । অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে যুক্ত হোল উচ্চারন – এ আমার কথা নয় নৃতত্ববিদদের কথা । শব্দ উচ্চারণে প্রতিটি গোষ্ঠীর ছিল আলাদা আলাদা পদ্ধতি – ঠোঁটের , জিহ্বার মাংস পেশীর পৃথক ব্যবহার ।একাধিক গোষ্ঠীরা যখন মিশে গিয়ে বড় বড় গোষ্ঠী হোল – ভাষারও মিশ্রণ হোল । একের থেকে অন্যের দেয়া নেয়া আর কি । এখনও দেখুন আমরা শারীরিক ভাষা ভুলতে পারিনি – কথা বলার সময় শরীরও কথা বলে । এভাবেই বিকশিত হয়েছে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ভাষার ।
আজ মাতৃভাষা দিবসে নিজের ভাষায় কথা বলা নিয়ে আমরা মুখর। এমন একদিন আসবে যেদিন পৃথিবীর সব মানুষের মিথস্ক্রিয়ায় সব ভাষা থেকে এক ভাষায় কথা বলবে মানুষ । সেদিন অবশ্য খুব কাছেই সেটা বলা যায় না- কারন আজও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বেড়াজালে আবদ্ধ মানুষ । ততো দিন চলুক না নিজ ভাষা নিয়ে অহঙ্কার। এতো যুগ-ধর্ম মাত্র । যখন নিজ দেশ থেকে, “পৃথিবী আমার” এই চিন্তায় উত্তীর্ণ হবে মানুষ তখনই কেবল সম্ভব এক ভাষার উদ্ভবের- যে ভাষা হবে সম্পূর্ণ মানব সমাজের।
তবে তার পূর্বশর্তও রয়েছে । কোন ভাষাকে রাজানুকুল্য দেয়া আর কোন ভাষাকে ভিখিরি করে রাখা দিয়ে তো ভাষার বিকাশ হতে পারে না- যাতে শ্রেষ্ঠ ভাষাটি উঠে আসে সকলের গ্রহণযোগ্য রূপে ।
অর্থনীতিটা বড় বেড়ে জিনিষ , সব কথায় এসেই যায় ।অর্থনৈতিক প্রাধান্যের উপজাত হিসেবে কোন ভাষা প্রাধান্য পেয়ে যায় ।সকল ভাষাকে সমান সুযোগ (কোন ভাষাকে বিশেষ সুযোগ না দিয়ে ) দিলে মানুষই বেছে নেবে মানবজাতির একক ভাষা- সে পথেই একদিন উচ্চারিত হবে একই ভাষা, সারা পৃথিবীতে । এ মোটেই ইউটোপিয়া নয়, এ বিজ্ঞান । সমাজ বিজ্ঞানের গতিপথ চর্চা করলে এ সিদ্ধান্তে আপনাকে আসতেই হবে ।
সে সুদূর দিন আসার আগে, শাসকের বেছে নেয়া ভাষার রাষ্ট্রীয় আনুকুল্যে আধিপত্য বাদের বিরুদ্ধে কথা বলুন – যোগ্য ভাষা আপনাতেই পথ করে নেবে- মানুষের অভিব্যক্তি প্রকাশের সেরা মাধ্যম হিসেবে।

২১/২/২০১৭

পার্থ প্রতিম আচার্য

Friday, February 17, 2017

।।সোশ্যাল মিডিয়ায় সৃজন বিস্ফোরণে আতংকিতদের প্রতি ।।


।।পার্থ প্রতিম  আচার্য।।

দিনকালের গতি দেখে মনে হচ্ছে একাংশ স্বঘোষিত পণ্ডিতদের ,সবার নয়, (জেন্ডার নির্বিশেষে) টিকিতে টান পড়েছে । অনেক কালের সযত্নে লালিত নকাব খসার ভয়। এই ভীতুরা সমাজ বিজ্ঞানের অ আ ক খ শেখেন নি বরং ওটাতে নাক সিটকেছেন চিরকাল- দরকার ও পরেনি। “এমনি করে যায় যদি দিন যাক না”- সাজুগুজু তে মঞ্চ শোভিত করে, দুচারটে বাজারু শ্লোগান গুঁজে দিয়ে ,কিম্বা কয়েকটা অশ্লীল গাল লেখায় ঢুকিয়ে , মনের গহিন থেকে গহিনতর প্রকোষ্ঠে অভিসার নিয়ে বেশ সুখেই ছিলেন তেনারা। কিন্তু উৎপাদনের সামাজিকিকরন প্রক্রিয়ার ব্যপক বিকাশে এরা দিশেহারা । করুনা হয় যখন দেখি ভবিষ্যৎ না দেখতে পাওয়া এইসব বুদ্ধিজীবীদের আর্তবিলাপ – “গেলো গেলো সব গেলো /ফেইসবুক খেয়ে নিলো” ।
হায়রে,শিল্পের একচ্ছত্র এইসব অধিপতিরা কতো সুন্দর নিজেদের সংসার চালিয়ে যাচ্ছিলেন ,আমার লেখা তুমি পড়বে/মন্দ নয় ভাল বলবো /তোমার বেলাও তাই হবে /কোন বেটা কি কবে?
এবার সাধারন ছাপোষা বলে যাদের চিরকাল নাক সিটকেছেন তারাও আজ ফেইস বুকে কথা বলছে ! কি কাণ্ড, কাণ্ড! “ মূর্খের দল আবার কথা বলতে পারে নাকি?কথা বলার ও শোনানর একচ্ছত্র ঠিকেদার তো আমরা । অর্বাচীনের দল কমল বনে মত্ত হস্তির মতো কোত্থেকে ওড়ে এসে জুড়ে বসছে , গ্রুপ বানাচ্ছে ,  তর্ক করছে , কবিতা লিখছে, লিখছে মন খুলে যা আসছে সভ্য সংস্কৃতির বারোটা বাজাচ্ছেসুতরাং জোট বাঁধো , তৈরি হও – শ্যাওলা পড়া দুর্গ রক্ষা করতে হবে।কলম তোল ,গাল পারোজনমুখি নকাবটা খসে পড়লে পড়ুআত্মরক্ষার প্রশ্ন।

হে লোলচর্ম পুরাতন- জানেন কি আপনাদের ইচ্ছেতে সমাজের একটা পাতাও নরেনা – ইতিহাস আর সমাজ বিজ্ঞানের পুঁথি গুলু ঘরে সাজিয়ে না রেখে একটু অধ্যয়ন করুনঐ বিজ্ঞানের অনিবার্য নিয়মেই আজ শত ফুল ফুটছে –এতো গাত্রদাহ কেন ?
ভাষণ, সংগীতে আর লেখায় তো “সবারে করি আহ্বান” বলে গলা ফাটান ।“সবাই” টা আপনাদের কাছে কারা বলুন তো? “আমি,সে ও সখা”?
ছাড়ুন ইতিহাসের আস্তাকুড় থেকে যদি বাঁচতে চান তবে নতুন কে বরন করুন । ফেইসবুক কে এত হিংসা আর ঈর্ষা কেন? ওখান থেকে জনতার ভাবনা গুলু বুঝুন- আপনারা যাদের কথা বেচে আপনারা হয়েছেন- তারা মুখ খুলছে- রিক্স্ওয়ালা থেকে ছাপোষা গৃহ বঁধু , ছাত্র থেকে শিক্ষক । তবে নাক সিটকানোটাও একটা উত্তরাধিকার , এমনকি সোভিয়েত বিপ্লবের সময় ও বুদ্ধি বেচনেওয়ালারা এমনই করেছিল (ওটা ছিল সচেতন সামাজিক বিপ্লব আর এতো ইতিহাসের অমোঘ বিবর্তন মাত্র )পরে এরাই নিজেদের “ছোটলোকদের’ সাথে মিলিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল ।ইতিহাসের গতিপথে বাধ্য হয়ে বাতিল হওয়ার আগে ভাবুন।দয়া করে সামাজিক গতিশীলতাকে বুঝুন না হলে ঠাই কিন্তু সেই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে

পুনশ্চ – আমি থাকি আর আর না থাকি মিলিয়ে নেবেন কোন আরও উন্নত সামাজিক মাধ্যম যদি উদ্ভাবন না হয় আগামী দশ বছরে ই বুক, ব্লগ আর সামাজিক মিডিয়াই হতে চলেছে নতুন সৃষ্টির স্থান ।

পার্থ প্রতিম আচার্য
১৭/২/২০১৭



পরিবর্তনের দ্যোতকদের চ্যালেঞ্জ



পার্থ প্রতিম আচার্য

আজকের পৃথিবীতে প্রতিটি মননশীল ব্যক্তি চলমান সামাজিক ব্যবস্থা থেকে উত্তরন চান আসলে এর পেছনে ক্রিয়াশীল জনগনের মধ্যে থাকা শেকল ভাঙ্গার আকাংখা।কিন্তু যে প্রশ্নটা ভাবায় তাহলো- কি ভাবে?
একজন শ্মশ্রু গুম্ফ শোভিত মহান দার্শনিক সোচ্চারে পৃথিবীর মেহনতিদের একদা জানান দিয়েছিলেন সমাজকে ব্যখ্যা অনেক হয়েছে , এখন কাজ হল তাকে পরিবর্তনের।
নির্ভুল বলেছিলেন তিনি এটা সন্দেহাতীত, কেননা এই ব্রহ্মাণ্ডে যদি কোন শাশ্বত নিয়ম থাকে তা হোল পরিবর্তনের নিয়ম সমস্ত বস্তু জগতই গতিময়তায় রয়েছে, এটা বিজ্ঞান দ্বারা স্বীকৃত সত্য
প্রশ্নটা হলো, যদি সবকিছুই নিয়ত গতিশীল যে গতিময়তা তাকে নিয়ে যায় ব্যক্তির ইছানিরপেক্ষভাবে পরিবর্তনাভিমুখে তাহলে ব্যক্তির পরিবর্তনের দ্যোতক রূপে ভূমিকাটা কি? হয়তো  ব্যক্তির কাঙ্খিত পথে পরিবর্তন কে দেখার অভিলাষটাই রয়েছে এর পেছনেরয়েছে এমন একটা বাসনা যাতে আসন্ন পরিবর্তন হয় সহজতর/স্বল্প আয়াসলব্ধ(আমার পূর্বে উল্লিখিত  দার্শনিক এটা আগেই বলেছেন একটু অন্য ভাষায়) কোন পরিবর্তন/গুণগত রূপান্তরন যদি পরিকল্পিত কাঙ্খিত পথে ঘটাতে হয়(অবশ্যই সেটা হতে হবে প্রকৃতির পরিবর্তনের নিয়মের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে) তবে আমাদের দরকার পরিকল্পনাকারীরসেই সব মানুষ যারা বিষয়গত উপাদান হিসেবে আসন্ন পরিবর্তনকে স্বল্প-আয়াস লব্ধ করে(পরিমানগত পরিবর্তন বস্তুর ঘটে চলেছে প্রতি পলে , ব্যক্তি.বিশেষের ইচ্ছানিরপেক্ষভাবে)
 কিন্তু আমার মনে হয় সেই রূপ পরিকল্পনাকারী হওয়ার কিছু পূর্বশর্ত আছেওটা হতে হলে গতিময়তার মধ্যে অবস্থিত বস্তুটি সম্পর্কে তার/তাদের সম্যক জ্ঞান থাকাটা আবশ্যিক নয় কি? প্রসঙ্গে আমার অতি সাম্প্রতিক একটি অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ছেআমাদের রাজ্যের বিখ্যাত সাংবাদিক মানস পালের একটা পোস্ট সেদিন দেখলাম । তিনি লিখেছেন তার তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া সন্তান তাকে জিজ্ঞেস করছে----বাবা  নিবিরু মানে কি? বিষয়টা আমাকে ভাবিয়েছেমনে হয়েছে যে এই প্রজন্মের শিশুদের ভাবনার জগৎ এর সঙ্গে আমরা কতোটা পরিচিত তা পরখ করে দেখা যেতেই পারেসুযোগটাও আলটপকা এসেই গেলোঅতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উচ্চবুনিয়াদি বিদ্যালয় স্তরের শিশুদের একটা ওয়ার্ক শপ রিসার্স হিসেবে কাজ করতে গিয়ে দেখা হলো বিদ্যালয়গুলিকে আদর্শ শিখন প্রতিষ্ঠানে (learning organization , google it for the detailed explanation of the term)রূপান্তরে আগ্রহী একদল ডেডিকেটেড(dedicated) মানুষের সাথেএই সুযোগ কি আর হাত ছাড়া করা যায় ?একটা রিফ্লেক্টিভ সেশানে প্রশ্নগুলো উত্থাপিত করে দিলাম--- যেমন )এরিয়া ৫১ বলতে কি বুঝেন? ) জম্বি কি শুনেছেন? ) ইলুমিনাট্টি কি? )"মানুষ কখনও চাঁদে নামেনি "--ভিডিও দেখেছেন? )ডোরেমন এর গ্যাজেট গুলো কি কি? )ইনস্টাগ্রাম,স্নেপচ্যাট,নিবিরু,এপোকেলিপ্স কি ? ইত্যাদি ইত্যাদি
(পাঠকরা দয়া করে আমাকে এই প্রশ্নগুলো করার দায়ে অভিযুক্ত করবেন না---ওখানে জড়ো হওয়া প্রায় সবই শহর বা শহরতলীর বিদ্যালয় থেকে আসাআর এই ঘটনার উল্লেখ করা আমার প্রতিপাদ্য নয়কেবল প্রতিপাদ্যের সমর্থনে উল্লেখ করলাম )
 দেখলাম অনেকেই ডোরেমন সম্পর্কে অবহিত হলেও বাকি বিষয়গুলি ঠিক জানেন না আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো সেই শ্মশ্রু গুম্ফ শোভিত দার্শনিকের শব্দগুলো--- "যদি আপনি পরিবর্তনের দ্যোতক হতে চান তবে আপনাকে গতিময়তার মধ্যে বস্তুকে জানতে হবে" আমরা যদি বর্তমান প্রজন্মের মনস্তাত্ত্বিক গঠনই না বুঝি(তা যত আবর্জনার স্তুপ দিয়েই ভরা থাকুক না কেন,বা যত ষড়যন্ত্রের বাস্তবায়নের ফসলই হোক না কেন) যদি শুধু নিজেদের যান্ত্রিক  চিন্তার ধরন/দিক দিয়েই সব বিচার করি তাহলে আমরা কি পরিবর্তনের দ্যোতক হতে পারবো? উত্তরটা অবশ্যই হবে নেতিবাচকএমনকি যে কোনো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার জন্যেও আপনাকে, যার ওপর পরীক্ষা চালাবেন তার ক্রিয়াশীলতাকে বুঝতে হবে -রুপান্তরন  এছাড়া অসম্ভব ,ইউটোপিয়া মাত্র
 তথাকথিত উত্তর আধুনিকতার যুগে (যাকে পূর্বে উল্লিখিত দার্শনিকের অনুসরণকারী আমরা বলি বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার যুগে, আমার আপনার ইচ্ছা নিরোপেক্ষভাবেই পৃথিবীটা ছোট হয়ে চলছে প্রতি নিয়তঅর্থনীতির পরিবর্তনের পদাঙ্ক অনুসরণে সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়া আজ নিয়মে পর্যবসিতআজ থেকে দশ পনেরো বছর আগের শিশুর মননে আজ বিশাল পরিবর্তন ঘটেছে,ঘটে চলেছে আমার প্রশ্ন হলো পরিবর্তনের দ্যোতকরা যদি এই ঘটে চলা আর্থ-সামাজিক সংষ্কৃতিক পরিবর্তন তার ফল শ্রুতিতে ব্যক্তি মানসে পরিবর্তনকে ধরতে না পারেন তাহলে তিনি বা তারা কি তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন? তিনি/তারা যদি নিজেদের প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তনমুখি প্রবনতাগুলি সম্পর্কে নিজেদের update না করেন তাহলে কি পরিবর্তনের সহায়তাকারী হিসেবে তাদের ভূমিকা পালন করতে পারবেন? সেটা শিক্ষা ক্ষেত্রেই হোক বা সামাজিক ক্ষেত্রে ? 
তবু পরিশেষে আমি ফিরে যাই আমার মহান দার্শনিক গুরুর কাছেই আর আশা করি বস্তুগত স্থিতির পরিপক্কতার উপর জানি অবস্থাই জন্ম দেয় কাঙ্খিত সেই মানুষগুলির ওঠে আসাকেসেই বিষয়গত শক্তি যার উত্তাপে গর্ভের সন্তান প্রস্ফুটিত হবে নতুন আশা নিয়ে --- কারণ এর কিছু জানি বা না জানি,এটা নিশ্চিত জানি ---সব অবস্থাই ক্ষণস্থায়ী মাত্র

পার্থ প্রতিম আচার্য
১৪/২/২০১৭