।।পার্থ প্রতিম আচার্য।।
প্লাতিনাস সেই কবে বলেছিলেন সৃষ্টির প্রানশক্তি হল শব্দ (তার ভাষায় লোগস)।
কিন্তু তিনি ভ্রান্ত ছিলেন । মানুষ ,মানুষ হয়েই কথা বলতে শেখেনি। হাইডেলবার্গ
মানুষরা খাদ্যের সন্ধানে বেরুলে পশুর মতই চিৎকার করতো । সে ভাষা সাংকেতিক। শিকার
না আসা পর্যন্ত ভাষার উৎপত্তি হয় নি । প্রয়োজনই আবিষ্কারের জননী- এই কথা মাথায়
রাখলে বুঝতে অসুবিধা হয়না, ভাষাও প্রয়োজনেই তৈরি হয়েছে মাত্র। যখন শিকারের
প্রয়োজনে যৌথ সমাজের উৎপত্তি হোল ,দরকার হোল মানসিক বক্তব্য আদান প্রদানের – তা
আগের চেয়ে অনেক বেশি । হাত - পা নাড়া , শারীরিক ভাষায় টান পড়লো – এইসব ক্রমশ বাতিল
হতে লাগলো । অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে যুক্ত হোল উচ্চারন – এ আমার কথা নয় নৃতত্ববিদদের কথা
। শব্দ উচ্চারণে প্রতিটি গোষ্ঠীর ছিল আলাদা আলাদা পদ্ধতি – ঠোঁটের , জিহ্বার মাংস
পেশীর পৃথক ব্যবহার ।একাধিক গোষ্ঠীরা যখন মিশে গিয়ে বড় বড় গোষ্ঠী হোল – ভাষারও
মিশ্রণ হোল । একের থেকে অন্যের দেয়া নেয়া আর কি । এখনও দেখুন আমরা শারীরিক ভাষা
ভুলতে পারিনি – কথা বলার সময় শরীরও কথা বলে । এভাবেই বিকশিত হয়েছে বিভিন্ন
জনগোষ্ঠীর ভাষার ।
আজ মাতৃভাষা দিবসে নিজের ভাষায় কথা বলা নিয়ে আমরা মুখর। এমন একদিন
আসবে যেদিন পৃথিবীর সব মানুষের মিথস্ক্রিয়ায় সব ভাষা থেকে এক ভাষায় কথা বলবে মানুষ
। সেদিন অবশ্য খুব কাছেই সেটা বলা যায় না- কারন আজও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বেড়াজালে
আবদ্ধ মানুষ । ততো দিন চলুক না নিজ ভাষা নিয়ে অহঙ্কার। এতো যুগ-ধর্ম মাত্র । যখন
নিজ দেশ থেকে, “পৃথিবী আমার” এই চিন্তায় উত্তীর্ণ হবে মানুষ তখনই কেবল সম্ভব এক
ভাষার উদ্ভবের- যে ভাষা হবে সম্পূর্ণ মানব সমাজের।
তবে তার পূর্বশর্তও রয়েছে । কোন ভাষাকে রাজানুকুল্য দেয়া আর কোন
ভাষাকে ভিখিরি করে রাখা দিয়ে তো ভাষার বিকাশ হতে পারে না- যাতে শ্রেষ্ঠ ভাষাটি উঠে
আসে সকলের গ্রহণযোগ্য রূপে ।
অর্থনীতিটা বড় বেড়ে জিনিষ , সব কথায় এসেই যায় ।অর্থনৈতিক প্রাধান্যের
উপজাত হিসেবে কোন ভাষা প্রাধান্য পেয়ে যায় ।সকল ভাষাকে সমান সুযোগ (কোন ভাষাকে
বিশেষ সুযোগ না দিয়ে ) দিলে মানুষই বেছে নেবে মানবজাতির একক ভাষা- সে পথেই একদিন
উচ্চারিত হবে একই ভাষা, সারা পৃথিবীতে । এ মোটেই ইউটোপিয়া নয়, এ বিজ্ঞান । সমাজ
বিজ্ঞানের গতিপথ চর্চা করলে এ সিদ্ধান্তে আপনাকে আসতেই হবে ।
সে সুদূর দিন আসার আগে, শাসকের বেছে নেয়া ভাষার রাষ্ট্রীয় আনুকুল্যে
আধিপত্য বাদের বিরুদ্ধে কথা বলুন – যোগ্য ভাষা আপনাতেই পথ করে নেবে- মানুষের
অভিব্যক্তি প্রকাশের সেরা মাধ্যম হিসেবে।
২১/২/২০১৭
পার্থ প্রতিম আচার্য
একদ্ম খাঁটি কথা।
ReplyDelete