Thursday, February 23, 2017
যোরহাটের ছাত্রী শুভলক্ষীর প্রতিবাদে সামিল গোটা পূর্বোত্তর ভারতের জনা কয় লেখক, সম্পাদক, ব্লগার, অভিনেতা, শিল্পী, সমাজকর্মী
[ এই প্রতিবাদপত্র যে কোনো ব্লগে জোড়া যাবে। সংবাদ পত্রে ছাপা যাবে। ব্লগপোষ্ট প্রকাশ্যে আসবার পরেও যদি আপনি স্বাক্ষর করে প্রতিবাদে সামিল হতে চান, ইচ্ছেটি ব্লগে মন্তব্য করে জানান, আমরা আগামী দুই দিন তিন দিন (২৬/২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭) অব্দি আসা সব নাম সম্পাদনা করে মূল পোষ্টে জুড়ে দেব। ]
ওরা আসে অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে, কখনোবা মাস্ক পরে। বাইক নিয়ে আসে, দুরন্ত গতিতে। আমি পথের একেবারে পাশ দিয়ে আসি। ওরা আমার গায়ের কাছে বাইক চাপিয়ে আনে আর আমার বুকে হাত দিয়ে চলে যায়। আমি স্তম্ভিত ...কী গেল এই মাত্র... আমাকে যেন বিছায় ধরেছে। আমি ঘরে চলে আসি।
ওরা আসে অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে, কখনো মাস্ক পরে। আমি পথের একেবারে পাশ দিয়ে চলি। এবারে কলেজের বেগটি আমি পিঠের বদলে বুকে নিয়ে আসি। ওরা আমার গায়ের কাছে বাইক চাপিয়ে আনে আর কোমরের তলার অংশে খামচে ধরে। কী ঘটল এই মাত্র। আমার গায়ে কাঁটা বিঁধে।
এবারে অন্ধকার হওয়া অব্দি অপেক্ষা নয় আর। চাই কি কাজগুলো আধাই করা হোক। চারটা বাজতেই আবাস ঘরে ফিরি। ওরা আজও এসেছে দুরন্ত গতিতে। আমার কানের কাছে কেউ একজন বলে যায়, ‘তোকে***...তোর***... বড় হওয়া অব্দি***.... ‘আজ আমি ওদের আঁচড়াতে যাই। দুরন্ত গতিতে এরা হাওয়া হয়ে যায়। আজ আমার বমি হয়।
(যোরহাটের ডিসিবি রোডে আমার বাসা। এখান থেকেই আমার যাওয়া আসা। এই পথে আমার সঙ্গে এতো সব শারীরিক মানসিক নির্যাতন হয়েছে যে আমি আর ঘরের থেকে বেরুতে চাইনে। অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। আজ পর্যন্ত চারবার অতি নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটেছে আমার সঙ্গে।কেবলই আমার সঙ্গে নয়, এই পথে আসা যাওয়া প্রায় সব মেয়েদের সঙ্গে। সন্ধ্যা ৬টায় কোনো মেয়ে একা হাঁটে না এই পথে। আমি জানি ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে আমি কিছু করতে পারি না। কিন্তু আজ আমার সঙ্গে যা ঘটেছে তাতে আমি অত্যন্ত অসহায় বোধ করছি। আমার রাগ উঠছে ভীষণভাবে আর অন্যদিকে ভয় হচ্ছে, কখনো আমাকে টেনে চিরচির করে ফেলবে না তো????)
[সিহঁত আন্ধাৰৰ সুযোগ লৈ আহে, কেতিয়াবা মাস্ক পিন্ধে। বাইক লৈ আহে, দুৰন্ত গতিৰে। মই ৰাস্তাৰ একেবাৰে কাষেৰে আহো। সিহঁতে মোৰ গাৰ কাষলৈ বাইক খন চপাই আনে আৰু মোৰ বুকুত হাত দি গুচি যায়। মই থৰ হৈ পৰোঁ..কি হৈ গ'ল এইমাত্ৰ...মোকযেন বিচাই ডাকে। মই ৰুমলৈআহো।
সিহঁত আন্ধাৰৰ সুযোগ লৈ আহে, কেতিয়াবা মাস্ক পিন্ধে। মই ৰাস্তাৰ একেবাৰে কাষেৰে আহো। এইবাৰ কলেজৰ বেগটো মই পিঠিৰ সলনি বুকুত লৈ আহো। সিহঁতে মোৰ গাৰ কাষলৈ বাইক খন চপাই আনে আৰু মোৰ ককাঁলৰ তলৰ অংশত খামোচি ধৰে। মই আকৌ মুক হৈ পৰোঁ। কি ঘটিল এইমাত্ৰ। মোক কাঁইটে বিন্ধে।
এইবাৰ মই আন্ধাৰ হোৱালৈ নৰ'ও।লাগিলে কামবোৰ আধৰুৱা হৈ থাকক।৪বজাত ৰুমলৈ ওভটো।মোক ৰক্ষা কৰা!! সিহঁত আজিও আহিছে দুৰন্ত গতিৰে। মোৰ কাণৰ কাষত কোনোবা এটাই কৈ যায় " তোক ***.. তোৰ ** বহল হোৱাৰ লৈকে ***..." আজি মই তাহাঁতক আচুৰিবলৈ যাওঁ। দুৰন্ত গতিৰ সিহঁত নিমিষতে বতাহত হেৰাই। আজি মোৰ বমি হয়।
(যোৰহাটৰ ডিচিবি ৰোডত মোৰ ৰুম। এই ৰুম হয়েই মোৰ আহযাহ। ৰাস্তাটোত মোৰ লগত ইমানেই শাৰীৰিক আৰু মানসিক নিৰ্যাতন হৈছে যে মই ৰুমৰ পৰা ওলাব নোখোজোঁ। অতিষ্ঠ হৈ পৰিছোঁ।আজিৰ লৈকে প্ৰায় ৪বাৰ অতি নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটিছে মোৰ লগত। অকল মোৰ নহয়, এই ৰোডেৰে অহা প্ৰায়বোৰ ছোৱালীৰ লগত। সন্ধিয়া ৬বজাত কোনো ছোৱালী অকলে নাহে এইফালে।মই জানো ফেছবুকত পোষ্ট দি মই একো কৰিব নোৱাৰোঁ। কিন্তু আজি মোৰ লগত যি ঘটিল মই খুবেই বেছি অসহায় অনুভৱ কৰিছোঁ। মোৰ খং উঠিছে ভীষণ ভাৱে আৰু আনফালে মোৰ ভয় লাগিছে, কেতিয়াবা মোক টানি আজুৰি চিৰাচিৰ কৰি নেপেলাইতো????)]
৮ ফেব্রুয়ারি, সন্ধ্যা ৬টা ৪৪মিনিটে এই ছিল যোরহাটের জেবি কলেজের ছাত্রী শুভলক্ষ্মীর লেখা ফেসবুক স্ট্যাটাস।তারপরের বাকিখানা ইতিহাস। ভয়ের সঙ্গে যুদ্ধে শুভলক্ষ্মী শুধু এ যাবত বিজয়ী নয়, সে এই প্রদেশের এমন বহু অপমানিতা, লাঞ্ছিতা তরুণী-কিশোরীর প্রেরণার স্থল। পরদিন থেকেই তাঁর কলেজের শুধু নয় সারা রাজ্যের দিকে দিকে প্রতিবাদের ঢেউ উঠে। ঢেউ উঠে ফেসবুকে , হোয়াটস আপে, ব্লগে, ওয়েবসাইটে ছাপা এবং বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমে, এবং রাজপথে। দলমত নির্বিশেষে ছাত্রদেরসঙ্গে সামিল হন রাজ্যের শিক্ষক বুদ্ধিজীবীরাও। এই অব্দি অপরাধী ধরবার সংবাদ নেই। কিন্তু সে কেন আগে পুলিশকে না জানিয়ে ফেসবুকে জানিয়ে দিল বলে ঘটনাক্রমকে হালকা করে ফেলবার প্রয়াস করেছেন রাজ্যের এক দায়িত্ববান মন্ত্রী। যেন বা ফেসবুকে লেখাতে অপরাধী পালিয়ে গেল, পুলিশে সংবাদ দিলে কবেই ধরা যেত। মন্ত্রী যাই বলুন, আমরা মনে করি পুলিশ বা প্রশাসন সেরকম আস্থা অর্জন করে নি বলেই একটি নির্যাতিতা মেয়ে জনতাকে জানানো শ্রেয় মনে করেছে। আর জনতা প্রতিবাদী হয়েছে বলেই, মন্ত্রীও কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন অন্যথা, এমন হাজারো ঘটনা যা নিত্য ঘটে বলে শুভলক্ষ্মীও ইঙ্গিত দিয়েছে, সে গুলোর মতই এও চাপা পড়ে যেত। শুভলক্ষ্মী একটি ছাত্র সংগঠনের প্রাথমিক সদস্যা। সেই সংগঠন প্রতিবাদে সরব হলে সে সেখানেও যোগ দেয়। সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সেই মন্ত্রী। বুঝিবা নির্যাতিতা মেয়ের কোনো ছাত্র সংগঠন করা উচিতই নয়। অথচ, ওর ফেসবুক স্ট্যাটাসের যে প্রত্যয় দীপ্ত এবং কাব্যিক ভাষা আমরা পড়ে এলাম এক সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ সংগ্রামী চেতনা সম্পন্ন তরুণীই শুধু এভাবে লিখতে এবং বলতে পারে। প্রেরণার অমল স্রোত হতে পারে অসংখ্য মূক মেয়েদের। আর এ শুধু সম্ভাবনা নয়, সেটাই এই মুহূর্তে এই রাজ্যে বাস্তব। তাই প্রশাসনও নড়ে চড়ে একেবারে বসে নি তাই নয়, যোরহাট শহরে পথের পাশে আলো বাড়ানো হয়েছে, পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। এবং বহু কলেজেGender Sensitisation Committee Against Sexual Harassment (GSCASH) স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু এই যথেষ্ট নয় বলে আমরা আসাম ত্রিপুরা সহ গোটা পূর্বোত্তর ভারতের লেখক, সম্পাদক, ব্লগার, অভিনেতা, শিল্পী, সমাজকর্মী নিম্ন-স্বাক্ষরকারীরা মনে করি। শুভলক্ষ্মী তাঁর পাশে দাঁড়ানো অসংখ্য সহযোদ্ধাদের অভিনন্দন জানিয়ে দুটি দাবি উত্থাপন করেছে। আমরা সে দুটি সমর্থন জানাচ্ছি:
১) সত্যকার অর্থে পুলিশের একটি হেল্প-লাইন নম্বর চালু করা উচিত।
২) প্রতিটি কলেজে Gender Sensitisation Committee Against Sexual Harassment (GSCASH) স্থাপন করা উচিত।
সেই সঙ্গে আমাদের সংযোজনঃ
৩) এরকম নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে অন লাইনে অভিযোগ জানানোর বিশেষ ব্যবস্থা হোক এবং/অথবা নির্যাতনের বিষয়ে যে কোনো মাধ্যমে দেওয়া বয়ান এফ আই আর হিসেবে গণ্য করা হোক।
৪) সেই সঙ্গে আমরা রাজ্য সরকারের দায়িত্ববান মন্ত্রীর এমন লঘু মন্তব্যের নিন্দে জানাই
এবং অচিরে শুভলক্ষ্মীর অপরাধীদের গ্রেপ্তার করবার দাবি জানাই।
ইতি
১) সীতানাথ লহকর ২) মৃন্ময় দেব
৩) শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার ৪)কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য
৫) মলয় কান্তি দে ৬) শ্যামল ভট্টাচার্য
৭) আবু হোসেইন ৮ ) অরূপ বৈশ্য
৯) অবনী কুমার সূত্রধর ১০) কিরণ শঙ্কর
১১) বিশ্বজিৎ দাস ১২) বাসব রায়
১৩) সন্দীপন ভট্টাচার্য ১৪)শিবাশিস চ্যাটার্জি
১৫) মুজিব স্বদেশি ১৬) ড্: মনিরুল হোসেইন
১৭) শিশির দে ১৮) আশু পাল
১৯) রাজেশ শর্মা ২০) উজ্জ্বল ভৌমিক
২১) সুদীপ নাথ ২২) দেবলীনা সেনগুপ্ত
২৩) চিরশ্রী দেবনাথ ২৪) কপোতাক্ষী ব্রহ্মচারী চক্রবর্তী
২৫) রঞ্জনকান্তি ভট্টাচার্য ২৬) রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ
২৭) নিরূপম শর্মা চৌধুরী ২৮) পারিজাত এন ঘোষ
২৯) ফজলুল করিম (ফোরাম ফর সোসাল হারমনি) ৩০) কৃষানু ভট্টাচার্য (ফো. ফ. সো. হারমনি)
৩১) মনোজিৎ দত্ত ৩২) জ্যোতিষ কুমার দেব
৩১) শিবানী দে ৩৪) শৈলেন দাস
৩৩) সাগরিকা সেন ৩৬) ধ্রূবজ্যোতি মজুমদার
৩৫) অর্জুন দাস ৩৮) শুভ্রব্রত চৌধুরী
৩৭) তমোজিৎ সাহা ৪০) এ এফ ইকবাল
৪১) রাজীব ভট্টাচার্য ৪২) মধুমিতা সেনগুপ্ত
৪৩) মানব রতন মুখোপাধ্যায় ৪৪) সন্দীপ দাস
৪৫) বিজয় ঘোষ ৪৫) সুমনা চৌধুরী
৪৬) ডক্টর পিঙ্কি পুরকায়স্থ ৪৭) মাশুরুল বারি
৪৮) পদ্মাক্ষ এন বি যিশু ৪৯) আশফাক হাবিব চৌধুরী
৫০) সুশান্ত কর ৫১) রাজ চক্রবর্তী
৫২) এম রিয়াজুল আজহার লস্কর। ৫৩) বিদ্যুত সাগর
৫৪) তাফি মুখার্জি ৫৫) প্রীতিভাজন ব্যক্।।
৫৬) শৈবাল কান্তি দাস। ৫৭) মুহম্মদ কবীর স্বপ্নীল
৫৮) নীলাক্ষ কে চৌধুরী ৫৯) অলক বিশ্বাস
৬০) রাহুল চৌধুরী
৫৪) তাফি মুখার্জি ৫৫) প্রীতিভাজন ব্যক্।।
৫৬) শৈবাল কান্তি দাস। ৫৭) মুহম্মদ কবীর স্বপ্নীল
৫৮) নীলাক্ষ কে চৌধুরী ৫৯) অলক বিশ্বাস
৬০) রাহুল চৌধুরী
~~~~~~~~~~~~০০০০~~~~~~~~~~~
(এই প্রতিবাদপত্রটি স্বাধীন ভাবে ঈশানের পুঞ্জমেঘ ফেসবুক গ্রুপের কিছু সদস্য শুরু করেন। এবং ক্রমে ক্রমে এই ফেসবুক গ্রুপের ভেতরের এবং বাইরেরও কিছু ব্যক্তি এসে পাশে দাঁড়ান। ফেসবুক গ্রুপে তৈরি বলে, ঈশানের ব্লগেও প্রতিবাদ পত্রটি এল। গ্রূপ কিংবা ব্লগ হিসেবে এই প্রতিবাদ সঙ্গে ঈশানের পুঞ্জমেঘ -একটি বাংলা গোষ্ঠীর সরাসরি কোনো যোগ নেই। এই প্রতিবাদ পত্রের কোনো অভিমত কিংবা বক্তব্য ব্লগ বা গ্রুপের বক্তব্য নয়" ।---মুখ্য সমন্বয়ক, এডমিন গোষ্ঠী; ঈশানের পুঞ্জমেঘ)