Friday, March 27, 2020

A reflective journey on the theatre of Tripura on World Theatre Day 2020



( This article may have many generalizations as I tried to avoid a long one. Forgive me for that but try to ponder about the crux)
As a Tripurite, I extend my heartful good wishes to all the theatre artists, critics and the theatre audience of the world on this International Theatre Day2020
   Let me start with my childhood and early youth. Living in a very little state, and being the victim of hegemonistic indifference by the leaseholders of the Bengali theatre-makers of  West Bengal  &  Bangladesh the rootless refugee Bengalees engaged in theatre-making could not draw their marks on the theatre world of India. Though historically plays were being performed here for the last hundred years or so. Communication with the other parts of the country was tough and costly. Some resorted to going to Calcutta to watch plays and to copy that on our stages. You may call it a colony treated by the leaseholders of Bengali theatre. Newspapers of the state also were under the shadow of this hangover.
Hardly our predecessors looked into the formation of a brilliant, sparkling growth of a mixed culture of the lovely state’s own. But thanks to time. During the last few years of the decade of seventy, creative artists of Tripura started their somewhat independent journey. Local forms started to be explored by artists like Hiralal Sengupta and many others. Local scriptwriters telling the joys and pains of the people were composing plays. But the indifference continued till the communication developed with the rest of India save Bengal. I am  not giving any importance here to the occasional participation of Tripura’s plays at Lucknow (the champion team of office drama competition, the judges also were used to be imported from Calcutta)
Thanks to the tireless work of some of the theatre groups of the decade of late eighty and early ninety, more and more plays had started to be performed at Bangladesh and other parts of our own country. But perhaps it will not be a blunt statement if I say that after the entry of Kanhaiyalal in the theatrical field of Tripura situation started taking a different step. A disciple of him Madhusudan Debbarma took the lead and soon the gate became open. The theatrical language of our own was taking shape. With the entry of NSD, SNA this got impetus. The massive development of communication has made it easier than ever to showcase the creativity of our own theatre to the country. To me, it appears that to various parts of the country the works of Tripura’s theatre artists are being lauded simply because of the display of the culture of its own.
I appeal to all theatre lovers of Tripura to
1.      Create theatre that has an odour of our land, the content may be universal, I confine myself to the form.
2.      The newspapers should publish regularly articles/criticisms of local theatres.
3.      Be proud of our mixed demography and its output of a mixed culture
4.      Look more towards other parts of India.
5.      Appreciate, if appreciable the works of all groups of the state.
6.       create outstanding plays ( including Puppet )
P.S- This writer has no intention of belittling the role of WB Theatrepeople he is only criticizing the mindset of Tripurites. English has many forms, Britsh, American, Australian, Indian etc. Similar analogy may be drawn in case of Bengali. As an artist, we know Art has no boundary. My only appeal to all the theatre lovers of Tripura to look beyond a limited space. I refrain in this article, myself, to name the living outstanding theatre artists of Tripura. I strongly believe that WE SHALL OVERCOME.

Partha Pratim Acharya. 27/3/2020



Tuesday, October 9, 2018

বেসুরো

ছন্দময় ব্রম্মান্ড , হকিং এর দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন ।যেখানেই তাকাও , তাক লাগানো নিখুঁত আঙ্কিক সামঞ্জস্য, এ আর রহমানের ছান্দিক "ছাইয়া ,ছাইয়া"। কুঁড়ি মেলা ফুলে, কচি -বুড়ো পাতায় ফিবনাচ্চি সংখ্যা । ভিট্রুভিয়ান ম্যান থেকে লুভর এর সাজানো ফ্রেমবন্দী পেইন্টিং কিংবা কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর বাইনারি ভাষা আর ঝাঁকড়া চুলো জাকির হোসেনের তবলা কিংবা কৌশিকী চক্রবর্তীর মারু বেহাগ সবেতেই কি অদ্ভুত আড়াল করা যোগ বিয়োগ গুন ভাগ-সুর তাল ছন্দ লয়। মনে পড়ে "সুর" সিনেমার কথা যেখানে সংগীত গুরু বাবা তার দুই মেয়েকে হাতে ধরে প্রকৃতির সুর শোনাচ্ছিলেন বৃষ্টি ভেজা এক সন্ধ্যায়... কলেজ ছুটির পর শ্যামল স্যার এর এই সব কথা গুলোই ভাবতে ভাবতে হাঁটছিল পৃথা। আলোচনাটা শুরু হয়েছিল তার নাম নিয়েই। স্যার বলছিলেন গ্রীক পুরানে পৃথার মতোই এক দেবী আছেন তার নাম গাইয়া- সকলে খুব জোর হেসে উঠেছিল একমাত্র স্যার ছাড়া । তিনি বললেন, উনি পৃথিবীর দেবী। এরপরই স্যার কেমন অন্য মানুষ হয়ে গেলেন ।বললেন পৃথিবীর কথা ,ক্রমশঃ বিশ্ব ব্রম্মান্ড থেকে প্রকৃতির গুপ্ত রহস্যময়তার আড়ালে থাকা নকশার কথা। কলেজে পৃথা স্যারের ক্লাস এই প্রথম এটেন্ড করলো। অংকের ক্লাস এরকম হতে পারে তার ধারণাতেই ছিলো না। কেমন যেনো ঘোর লাগা এক অনুভূতি।

হঠাৎই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অন্যতম আবিস্কার তার ঘোর ভাঙাল । এই শব্দগুচ্ছ তার কাছে একেবারেই নতুন যদিও ব্যাগের ভেতরের মুঠো ফোনটি প্রায় দু’বছেরর পুরনো।সেটা যে এই বিপ্লবের ফসল তা দু’দিন হোল জেনেছে সে ।আম্মুর কল-“আসার সময় আমার জন্য একপাতা লেভোসেট্রিজিন নিয়ে এসো”। নিশ্চয়ই আম্মু আজ ঘর পরিস্কার করতে লেগেছে। কতবার সে না করেছে, “তুমি ওসব আমার হাতে ছাড়ো , তোমার ডাস্ট এলারজি এরপর সারাদিন হাঁচতেই থাকবে”। কে শোনে কার কথা –আব্বু বলতো –“ তোর আম্মুর তুরতুইরা স্বভাব”।আম্মু তখন গরম কড়াইয়ে কড়কড়ে পাঁচ ফোঁড়ন –“সারাটা জীবন তো খোঁচা মারা কথা বলেই কাটিয়ে দিলে- তোমার মতো লোকের সংসার পাতাটাই ঠিক হয়নি”। পৃথাও তখন আম্মুর পক্ষ ধরতো যদিও ভেতরে ভেতরে লোকটাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতো ও ।অগোছালো মানুষটা মা মেয়ের সামনে অপরাধী মৌনতায় যখন ডুবে যেতো ওর খুব হাসি পেতো। কারন সে জানতো খানিক পরেই আব্বুটা আম্মিকে তেল মারবে তারপর ডুবে যাবে একগুচ্ছ বই এর আড়ালে ।“কি লাগবে?লেভোসেট্রিজিন নিশ্চয়ই”।কমলাসুন্দরী মেডিকেলের প্রদীপ আঙ্কেল এর গলা।
ওষুধ নিয়ে পৃথা দ্রুত পা বাড়াল বাড়ির দিকে ।বাড়ির আগের বাঁদিকের গলির মোড়টায় চোখ যেতেই হঠাৎ ধড়াস করে উঠলো বুকটা –এরকম অনুভুতি তার কক্ষনো হয় নি-এ যেন সড়াৎ করে বুকের ভেতর একটা সাপের সরে যাওয়া ।শ্যমল স্যর । খোঁচা খোঁচা একগাল দাড়ি ।প্লাস ফ্রেমের ভারী চশমা , পানের টং এর সামনে সিগারেট হাতে। স্যর ওকে দেখেনি কিন্তু পৃথার কেন যে তখন দৌড়ে পালাতে ইচ্ছে হোল সে নিজেও জানেনা। দরজার সামনে এসে বেলে চাপ দিলো সে ।
***********************************************************************************************************
রাত নেমেছে নিঝুম পাড়ায় ।জানালার বাইরে শুধুই ল্যাম্পপোস্ট গুলোকে আবৃত করে থাকা অগুনিত পোকার সারি। এই পরিবেশটা বড্ড চেনা শ্যামলের—আকাশটায় আজ তারা নেই একটাও, শুধু একফালি চাঁদ ছুঁয়ে ভেসে যায় ধূসর থোকা থোকা মেঘ। সিগারেটটায় শেষ টান মেরে জানলা দিয়ে টোকা মেরে ফেলে দিল সে- তারপর তাকিয়ে রইলো যতক্ষণ না আস্তে আস্তে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে অন্ধকারে মিশে গেলো অবশেষ ।এই খেলাটা সে খেলছে বেশ ক’দিন ধরেই।শ্বেতপরীর এইভাবে জ্বলতে জ্বলতে নিভে যাওয়াটার সঙ্গে কারও জীবনের মিল খোঁজে শ্যামল।

পর্দাটা টেনে নিজেকে বাইরের হাঁ করা ঐ মহাজাগতিক বিন্যাসের সামনে দাঁড় করানো । আবার নিজেকে শামুক খোলসে জড়িয়ে নেয়া- মানে ১৩ফুট বাই ১৫ ফুট ঘরটাতে সেঁধিয়ে যাওয়া ।
এলোমেলো কুঁচকানো বিছানার চাদরটার উপরে ল্যাপটপের গ্লাসে চৌকোনা দিগন্ত বিস্তৃত নীলাকাশ – না ঘুমুলে কাল ক্লাসে যাওয়া হবে না ।হঠাৎই মনে এলো শুভেন্দুদার কথা – ইংরেজী’র অধ্যাপক। শ্যামলের চেয়ে পাঁচ ,ছ’ বছরের বড় হবে।অনর্গল কথা বলেন । এই তো সেদিন বলছিলেন – বুঝলে শ্যামল মনে হচ্ছে দেবী নিক্সের সঙ্গে তোমার আজকাল আড়ি চলছে ?তোমার কোটরে বসা চোখের তলার কালি দেখে তাই মনে হচ্ছে । উত্তরের অপেক্ষা না করেই নিজেই বলতে লাগলেন – দেবী নিক্স হোল গ্রীক ঘুমের দেবী, জিউস ও যাকে তোয়াজ করে চলেন । শোন ভাই, বয়েসটা তো চল্লিশও হয়নি এখনই এই অবস্থা হলে বাকি জীবন চলবে কি করে ? সরি,পঁয়তাল্লিশ- অগাস্ট নাইনটিন সেভেনটি ফোর –বলেছিল শ্যামল ।যাঃ বাবা বুড়িয়ে যাচ্ছো তো ।ভেবেছিলাম তোমায় বলবো ঐ সব সোশ্যালি এক্সেপটেড সিগারেট ফিগারেট ছেড়ে আমার মতো সুরাপান করো , দেবী তুষ্ট হবেন – তবে এখন আর ওটা হবেনা।এত্তো বয়সে ট্যাবু ছেড়ে বেরুনো কি এতো সহজ?সবাই কি আর শুভেন্দু পাল হতে পারে?তোমার এই অবস্থার কারণটা আমি বেশ বুঝে গেছি । বিনে পয়সায় একটা টোটকা দিয়ে যাই,যত তাড়াতাড়ি পারো বিয়েটা সেরে ফেলো ।দেবী নিক্সের আশীর্বাদও পেয়ে যাবে, চলি। শ্যামল মুচকি হেসে বলেছিল – আরে না শুভেন্দুদা আমার সঙ্গে দেবীর কন্যার সখ্যতা আছে তাই উনাকে তুষ্ট হতেই হবে।কার কথা বলছো ? অবাক প্রশ্ন ছিল শুভেন্দুদার।শ্যামল হিপ্নোস বলতেই কেমন অদ্ভুত ভাবে ওর চোখে চোখ রেখে শুভেন্দুদা বলেছিলেন-তুমি তো বেশ রহস্যময় লোক হে , পড়াচ্ছো অঙ্ক ওটা নিয়েই থাকো এইসব রিল্মে তুমি ঢুকোনা – যথেষ্ট পাগলামোর উপাদান অঙ্কেই আছে। ওসব মিথ টিথের চক্করে পড়লে মাথাটা আরও বিগড়াবে । তারপর মুখটা একদম সামনে বাড়িয়ে ফিসফিসয়ে জিজ্ঞেস করলেন-বাই দ্য ওয়ে , নেশা ফেশা করছো নাকি আজকাল?শ্যামল কিছু উত্তর দেয়ার আগে হেসে উঠলেন তিনি, যেন কর্ক খোলা পেপসির বোতল- তোমার দ্বারা ওসব হবে না।আসলে এ হলো পড়ার রোগ – অত পড়তে নেই বুঝলে –কনফিউজড হবে ।
চাদরটা গায়ে টেনে মাথার কাছের হলদে ডিবিটা খুলতে খুলতে শ্যামল অস্ফুটে বলল- ওয়েলকাম হিপ্নোস –তারপরই এলজোলামটা পুরে দিলো জিভের তলায়-রাত প্রায় আড়াইটা , চোখের পাতা যখন একটু একটু করে ভারী হয়ে আসছিলো ইয়ারফোনে তখন গান বাজছে –
“স্বপনে এসো নিরজনে ...
*****************************************************************************************************************
সেদিনের পর আরো দু’বার সূর্য উঠেছে, হেলেও পড়েছে পশ্চিমে । পৃথার কিন্তু কলেজ যাওয়া হয়নি। আম্মুর শরীরটা মোটেই ভালো ছিল না ।শেষমেশ মামার বাড়ি কল করেছিলো পৃথা । মামু এসে ডাক্তার দেখাল- বুকে কফ জমে গেছিলো ।এন্টিবায়োটিক দিয়েছে একগাদা । আজ একটু ভালোর দিকে তবে দুর্বলতা কাটেনি এখনো ।পৃথার আজকাল আম্মুকে নিয়ে খুব টেনশন হয়। আব্বুর ইন্তেকালের পর আম্মিই ওর সবচাইতে বড় ভরসা ।বয়েস হয়ে গেছে বলে আব্বুর চাকরিটা আম্মু পায় নি- আব্বুর অফিসের ওরা চেয়েছিল ডাই – ইন – হারনেসে পৃথাকে ক্লার্কে ঢোকাতে ।ও তখন বারো ক্লাসের পরীক্ষার্থী । আম্মু রাজি হলেন না । আব্দুল চাচা , ওদের মামারবাড়ির পাশেই থাকেন- ওদের পরিবারের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক। নিজের মামার মতোই । বড় চাকরি করেন ।কত্তোবার বললেন- চাকরিটা নিয়ে নিতে ।আম্মু একদম নারাজ – ওর আব্বুর স্বপ্ন ছিল মেয়ে বড় হবে- বড় পাশ করবে- যাতে পরের ঘরে গিয়ে গোলামী না করতে হয় । কেউ পারেনি মাজেদা বানু, মানে পৃথার আম্মুকে বোঝাতে । -একটা বাড়ি তো করে দিয়ে গেছেন। উপরতলায় ভাড়াটিয়া আছে , আর ফ্যামিলি পেনশন যা পাবো তা দিয়ে আমাদের মা মেয়ের চলে যাবে। মেয়েটা মানুষ হোক এটাই চাই ।
আর পৃথা? সেও কি চেয়েছিল চাকরি করতে ? স্কুলের রীতা দিদিমণি যখন স্কুটি চালিয়ে স্কুলে ঢুকত ও মনে মনে ভাবতো একদিন সেও এভাবে স্কুলে ঢুকবে – দিদিমনি হয়ে ।
আব্বুর ইন্তেকালের পর সে ভেঙ্গে পড়েনি বরং প্রতি সকাল সন্ধ্যা আব্বুর কোলে ছোট্ট পৃথার যে ছবিটা সে একেবারে নিজস্ব করে রেখেছিল, তার এগারো ক্লাসের অঙ্ক বইয়ের ভেতর্‌ সেটা খুলে দেখত আর বিড়বিড় উচ্চারন করতো – আব্বু আমি তোমায় কথা দিচ্ছি নিজের পায়ে দাঁড়াবো – আমি চেষ্টা করবো আব্বু ।
বারো ক্লাসের ফল যেদিন বেরুলো –সেদিন কত্তো কত্তো ফোন- মামার বাড়ি থেকে – স্কুলের টিচারদের থেকে- আব্দুল চাচা তো খাসীর মাংস নিয়ে হাজির, সঙ্গে জাকির- মানে চাচার ছেলে-বাইরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ।সবার এক কথা এবার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হবে ।বেঁকে বসেছিল পৃথা , ও এখানেই পড়বে এমনকি শহরেও যাবে না ।কেন? সে অনেক কথা। সবাই চলে গেলে রাতে পৃথা ফিরে যায় তার আব্বুর কোলে , যেন সেই ছোট্টটা । আব্বুর কানে কানে বলে – আব্বু আমি প্রথম ধাপ পার হয়েছি –
টগবগিয়ে ফুলকপি দেয়া মাছের ঝোল ফুটছিল কড়াইয়ে – আওয়াজে পৃথার হাসি পেলো ।হায়রে মন, সময় পেলেই খালি দৌড়ায় যেন গাভীর পেট থেকে বেরুনো বাছুর । তরকারিটা নামিয়ে গোসল ঘরে ঢুকছিল সে হঠাৎই আম্মুর ডাক –মোবাইলটা কখন থেকে বাজছে ,ধরবি তো।
জয়ের কল- ওদের সাথেই পড়ে, কেমিস্ট্রি ফোরথ্ সেমিস্টার ।- হ্যাঁ জয় বল ...না রে আম্মুর শরীরটা ভাল না...কবে?...ও আরও তো অনেকদিন, আমি হয়তো কাল থেকেই চলে আসবো ...আরে বাবা আসবো বলছি তো- ডিরেক্ট কে করছে? ... কি বললি ?...ক’টা থেকে রিহার্সাল ?–পৃথার হাতটা তখন কাঁপছে- দৌড়ে গোসল ঘরে ঢুকে পড়লো সে , তারপর দাঁড়িয়ে পড়লো শাওয়ার থেকে পড়া পানীর ঝর্নার নীচে। হাঁফ যখন ছাড়ল –তার সুরেলা গলায় মৃদু বেড়িয়ে এলো –
“দিল হ্যাঁয় ছোটা সা্‌...
*************************************************************************************************************
গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম জারুলতলা – যদিও জারুল গাছের চিহ্ন মাত্র নেই । প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় বানানো রাস্তাটা বেঁকে চলে গেছে জাতীয় সড়কের দিকে –দু’ধারে রাবার গাছের সারি ।পৃথাদের বাড়ী থেকে জাতীয় সড়ক প্রায় ১০ মিনিটের হাঁটা পথ । সড়ক থেকে বাঁ দিকের গলি দিয়ে ঢুকতে হয়। মূল রাস্তায় পড়লেই ব্লক অফিস,আর তার থেকে ৫ মিনিট হাঁটলেই তার কলেজ। জারুলতলার ও একটা ইতিহাস আছে নিশ্চয়ই কিন্তু পৃথার কাছে তা জানা নেই –শুধু আব্বু বলতেন ’৬২ সালে তিনি এইখানে আসেন।রাজধানী থেকে প্রায় তিরিশ কিলোমিটার দূরে এখানটায় আসার কারন আব্বুর অফিস – এখন যেখানে ব্লক অফিস আব্বুর অফিস নাকি আগে ওখানেই ছিল । আম্মির এক খালাতো ভাই এর বাড়ী ছিল এটা –পরে আব্বু কিনে নেয়। পৃথার জন্ম এখানেই। মুসলিম পরিবার প্রায় ১৫/১৬ ঘর,সবাই কাছাকাছি থাকে- পৃথা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছে এই অঞ্চলটাকে অনেকেই মুসলিম পট্টি বলে- আব্বু বলতেন- যারা বলে তারা মূর্খ –তোমাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে – জারুলতলা। মানুষ পৃথিবীতে ধর্ম নিয়ে আসে না-জন্মের পর ধর্ম এসে তোমার শরীরে লেপ্টে যায় । (ক্রমশঃ)
পৃথা অবশ্য এইসব নিয়ে তেমন ভাবেনি ছোটবেলায় –পাশের বাড়ীর পরিতোষ কাকুদের মনসা পূজায় কত্ত আনন্দ করেছে সে- আর ঈদের সময় সেমাই খাওয়া নিয়ে কি যে দুষ্টুমি – কিন্তু একটু বড় হওয়ার পর রাজধানীতে ওর মামার বাড়ীতে গিয়ে একটা প্রশ্ন জেগেছিল ওর মনে । যে অঞ্চলটায় ওর মামার বাড়ী সেখানে যেন সব মুসলিম পরিবারের জটলা । অন্য সম্প্রদায়ের লোকের বাস হাতেগোনা –অথচ একটু বেরুলেই আবার অন্য চিত্র । এক সন্ধ্যায় আব্বুকে জিজ্ঞেস করেছিলো সে, আব্বু কোন উত্তর দেয়নি শুধু ছোট্ট ক্যসেট রেকর্ডারে একটা গান চালিয়েছিল –
“শিশিরে ভেজানো রাতে...আমি যেন এক নিরাপত্তা হই”।
সেই জারুলতলা এখন অনেক এগিয়েছে – ক্যানড্ পেপসি থেকে, আঙ্কেল চিপস্ এখন পাড়ার দোকানে, দোকানে – অথচ ছয় ক্লাসে পড়ার সময়ও দোকানগুলিতে চা আর খাস্তা বিস্কিট ছাড়া কিছুই দেখা যেতো না ।ওদের এলাকাটা থেকে একটু এগোলেই দাস পাড়া আর ঐ এলাকা ক্রস করলেই মূল রাস্তা, কোনায় বড় দোকান ‘নিখিল পান ভাণ্ডার’ – সিগারেট , পান, ঠাণ্ডা পানীয়, কেক, বিস্কিট থেকে ,২টাকার শ্যাম্পু কিংবা পাঁচ টাকার ফেস ওয়াশ কি নেই সেখানে ।ঐ দিকটাতেই রীতা ম্যামদের বাড়ী –আর একটু দূরে ওদের কলেজ –স্কুলটা কলেজ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ।কলেজ আর স্কুলের মাঝামাঝি বাজার - ওর ছোটবেলায় সে বাজার বসতো সোম আর বৃহস্পতিবার –এখন রোজই বসে-সকাল বিকেল।ওখান থেকেই বাজার করে পৃথা ।কলেজ থেকে ফেরার পথে ।ঘড়িটা দেখল সে – প্রায় আড়াইটা ।রিহার্সালের টাইম দু’টায় , তেমন একটা দেরী হয়নি – তবু রাবার বাগানের বুক চেরা পীচের রাস্তায় যতটা দ্রুত সম্ভব হেঁটে চলল ও ।
***************************************************************************************************************
খাটের পাশটায় জানালার ফাঁক গলে বিষণ্ণ বিকেল-রোদ মুখে পড়তেই আনমনা হোল মাজেদা – এরকমই এক বিকেলের কথা মনে এলো ।দরজার সামনে শোয়ানো আসফাকের দেহ-ভিড় করে একদল মানুষ-কারো চেহারা মনে পড়ে না , শুধু মনে আছে হঠাৎই আছড়ে পড়লো একটা শান্তির জল –কলস। পৃথা ।একটু আগেও যখন দেহটাকে মনে হচ্ছিলো রাস্তার ধারে পড়ে থাকা বাতিল মূর্তি ,ঐ কলস ছোঁয়ায় মনে হোল –বেঁচে থাকতে হবে –অনেক কাজ যে ফেলে গেছে লোকটা ।মেয়েকে আঁকড়ে ধরে প্রথম চীৎকারে ঢেলে দিয়েছিলো তার একগাদা অভিমান আর কালো জমাট দুঃখ ।তারপর সটান উঠে দাঁড়িয়েছিল মাজেদা- যেনও ভেতর থেকে কেউ ঠেলে দিচ্ছিল সামনের দিকে – বিকেলের পড়ন্ত সূর্যের আলো আজকের মতো সেদিন ও কেঁদেছিল –আর সঙ্গে কেঁদেছিল ও —পেছন থেকে তার এলানো দেহটা কেউ ধরার আগে পর্যন্ত – যখন আবার জাগল –ততক্ষণে কবরের গর্তে অনন্ত বিশ্রামে চলে গেছে আসফাক ।আজ এই মুহূর্তে সে সব ছবির মতো ভেসে উঠছিল মাজেদার মনে – মাজেদা ভাবী বাসায় নাকি ?তারপর একটু কাশির আওয়াজ।গলাটা শুনেই চমকে উঠলো মাজেদা- সুধাংশুদা। কোত্থেকে যে শক্তি এলো দেহটায় । সোজা দৌড়ে নেমে দরজা খুলে বেরুলো সে – একতারা হাতে মাথায় কাপড় বাঁধা, কাঁধে ঝোলা সেই সুধাংশুদা।কতদিন পর- আসফাক ভাইয়ের খবরটা পাই নাই এতদিন- পাঁচ দিন হইলো জানলাম- ভাবলাম দেহা কইরা যাই আপনার লগে।–কই ছিলা এতদিন?-কেমন ঘোরে প্রশ্ন করে মাজেদা ।
-ঘুরতেছিলাম-আইজ ইহানে কাল অইহানে-এই মাডির শরীরটার ভিতরের পাহিডা কেবল ছটফট করে- বলে চল বাউলা জগতটায় রতন খুঁজি –যদি মিলে যায় – যেমন মিলছিল আসফাক ভাই । মাজেদা বসে পড়ে দরজার সামনের সিঁড়িটায় ...
সেই পৃথার জন্মের আগে থেকে সুধাংশুর সঙ্গে পরিচয় ওর ।আসফাকই নিয়ে এসেছিলো একদিন । বাইরে থেকেই চ্যাঁচ্যাঁতে ,চ্যাঁচ্যাঁতে এসেছিলো –ঘর তখন বেড়ার- দুই কোঠা- মাজেদা তখন রান্নাঘর পরিস্কার করছিলো –ঘরে ঢুকে চমকে ওঠেছিল সে –খাটের পাশের মোড়াটায় একজন অদ্ভুতগোছের লোক বসে – লম্বা দাড়ি , মাথায় গামছা বাঁধা ,গায়ে ছেঁড়াখোঁড়া আলখাল্লা-গরিবিয়ানা লেগে আছে অবয়বে । এর জন্যে এতো চ্যাঁচ্যাঁম্যাচি আসফাকের ? আশ্চর্য হয়েছিলো মাজেদা ।
-ইনি হচ্ছেন আমার বিবিজান-মাজেদা বানু , আর মাজেদা উনি হলেন আমার বন্ধু সুধাংশু-।মাজেদা কৌতূহলী দৃষ্টিতে ভ্রূ উঁচু করে আসফাকের দিকে ।- আমি বাউলা-সুধাংশু বাউলা –ঘর নাই- বাড়ী নাই –গান গেইয়ে বেড়াই গো -রতনের খোঁজ করি-মাঝে মইধ্যে মিলেও যায় –এই যেমন আপনার কানাই-আসফাক ভাই- ঐ বড় পাহাড়ের মইধ্যে দুজনায় দেহা – উনি আমার গান শোনেন আর আমি উনার কথা-। আমি চা করে আনছি , আপনি বসেন-
রান্নাঘর থেকে একতারার টুং টাং আওয়াজ আর দুজনের টুকরো টুকরো কথা ভেসে আসছিলো –চা নিয়ে যখন আবার ঢুকল মাজেদা – সুধাংশু কাপের চা প্লেটে ঢেলে ফুঁ দিয়ে খাচ্ছিল –আসফাকের উপর মাজেদার রাগ হচ্ছিলো খুউব।কোত্থেকে কাকে নিয়ে আসে—ভাবীজান নতুন ঘর বেইন্ধেছেন - চাইরদিন ধইরা কানাই বাড়ি নাই – আইজ আপনাকেই একটা গান শোনাই –শুনেন দেহি। একতারাতে আঙুল চলতে থাকে আর চোখ বুজে কি উদার গলায় গেয়ে ওঠে সুধাংশু-
বনমালী তুমি পরজনমে হইয়ো রাধা...
সেই তার বাউলার প্রেমে পড়া –ছ’মাসে ন’মাসে কোত্থেকে এসে উদয় হতো আবার চলেও যেতো । বলত- আসফাক ভাই হইলো পরশমনি – ছোঁয়া পাইলে অন্তরে পুষ্প ফুইট্যা উঠে – ওই বড় পাহাড়ের মানুষগুলার ভিতরে যেমন ফুল ফুটাইছেন তিনি – আহা রে কি না সুন্দর –বলেই হয়তো জুড়ে দিতেন কোন গান –
ভাবীজান ,ভাবতে ভাবতে জনম যাবে ভাবা তবু হবে না গো –আপনাকে কি কমু একটা গানই গাই শোনেন
“-কৃষ্ণ প্রেমে পোড়া দেহ-
কি দিয়ে জুড়াই বল সখী
কে বুঝিবে অন্তরের জ্বালা
কে মুছাবে আঁখি...”
মাজেদার গাল বেয়ে তখন নোনতা পানির শিশির বিন্দু-
******************************************************************************************************************
পৃথা যখন ঘরে ঢুকলো, তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে-মাজেদা তখন গেটের সামনে –এই আসা হলো?কত্তবার কল করেছি, ধরলে না কেন?আমার টেনশন হয়না বুঝি?
দেরী হয়েছে আর কি-–তুমি এই ভর সন্ধ্যায় বেড়িয়েছ কেনো? এরপর আবার শরীর খারাপ করবে–চলো,চলো –আগে আগে ঘরে ঢুকে যায় পৃথা।চলতে চলতেই মোবাইলটা বের করে - পাঁচটা মিসড কল ,আম্মির--স্থাণু হয়ে দাঁড়ায় সে কিছুক্ষণ -মাথায় যেনো আগুন জ্বলছে। আম্মির দিকে চোখ যেতেই দেখে অদ্ভুত মমতা ভরা দুটো চোখ যেনো অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে তার দিকে।–পৃথার চোখ ফেটে জল আসে।খাটের কোনটায় মাথা নীচু করে বসে পড়ে সে ।
– কি হয়েছে সোনা? – যেনো এরই অপেক্ষায় ছিলো পৃথা । দূরে কোনো টিলায় বৃষ্টি হলে তার জল যেমন বেগে নেমে আসে সমতলে তেমনি আম্মিকে জড়িয়ে কান্নায় নিজের ভেতরকে ঢেলে দেয় সে।
–আম্মি , বলো তুমি আমায় কক্ষনো ছেড়ে যাবে না ।
ধীরে ধীরে যখন ঝড় থামলো ,দুজনের ঘরে তখন শুধুই নৈঃশব্দ ।
–আমায় বলো, কি হয়েছে?
না আম্মি কিছু না–এই কলেজটা আমার একদম ভাল্লাগেনা ।
-সে কি এই তো পরশু বললে কলেজটাকে খুব মিস করছো– কিছু হয়েছে বুঝি ?–পারমিতার সঙ্গে ঝগড়া?
উঠে পড়ে পৃথা।চোখ মুছতে মুছতে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় । হাঁফ ছাড়ে মাজেদা। –এখনো সেই আগের মতোই আছে মেয়েটা ।
–আরে একসাথে চললে বন্ধুদের মধ্যে একটু আধটু ঠোকাঠুকি হবেই –এসব নিয়ে ভাবতে নেই, দুদিন পরেই আবার দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে- যাও মুখ হাত ধুয়ে কিছু খেয়ে নাও।কাল যে ম্যাগির প্যাকেট এনেছিলে সেটা আমি রেডি করে দিচ্ছি।পাগলী কোথাকার।
–তোমায় করতে হবে না ,আমি করে নেবো-তুমি রেস্ট নাও,পৃথা বললো।
- আরে আমি ঠিক হয়ে গেছি –শোনো তুমি যাওয়ার পর তোমার সুধাংশু চাচা এসেছিলেন- তোমার জন্য অপেক্ষা করে একটু আগে গেলেন।
–স্বাভাবিক থাকতে চাইছিল পৃথা , -কেমন আছেন চাচা?
–আগের মতোই, তবে দাড়ি পুরো সাদা হয়ে গেছে-তোমার আব্বুর কতো গল্প করলো।
–গান শুনিয়েছেন চাচা?
মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় মাজেদা। মনে মনে ভাবে-–ও যদি জানতো।
গোসল ঘরের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে ওটাতেই পিঠ দিয়ে দাঁড়ালো পৃথা।নিজেকেই যেনো ঘেন্না হচ্ছিল- নাকি অপমানে গা জ্বলছিলো বুঝতে পারছিলো না সে। আসলে বোধহয় অনেক রকম আবেগ যখন একসাথে মিশে যায় তখন তাদের আলাদা আলাদা চেনা যায় না। যেমন তার প্যালেটে রাখা সাত রং কে সে যখন একটার সংগে অন্য মিশিয়ে নতুন রং তৈরি করে তখন আর আলাদাভাবে কোনটাকে চেনা যায় না।
–এসব চিন্তা ছেড়ে গেলে তার মুখ থেকে প্রায় অস্ফুট একটা শব্দ বেরিয়ে এলো -অহংকারী।
ওর খুব রাগ হচ্ছিলো জয়টার উপরে - তোকে আসতেই হবে - হুঃ
। কেনো যে ও গেলো।নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছে হচ্ছে।
ঢোকা মাত্রই শ্যামল স্যার ওর উপর হামলে পড়বে সে ভাবতেই পারেনি।কি হয়েছে? না ওর মিনিট চল্লিশেক দেরী হয়েছে ।
– এই যে তোমার নামটা কি যেনো?
-পৃথা আক্তার । লাজুক মাথা নীচু করে বলেছিলো সে।স্যার তখনই বলে বসলেন
– একটা কথা পরিস্কার করে বলে দেই–নাটক হচ্ছে সাধনা -লেট করে পরদিন থেকে এলে কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হবেনা।
জয়টা পেছন থেকে বলে উঠলো –স্যার ও খুব ভালো অভিনয় করে।পৃথাও আত্মপক্ষ সমর্থনে বলতে চেয়েছিলো কিছু । কিন্তু দাম্ভিক লোকটা শুনবে কেন। বলেই চললো–নূন্যতম ডেডিকেশন না থাকলে অভিনয় করা যায়না।আজ তোমার রিহার্সেল করতে হবে না –দুটোর সময় শুরু হয়েছে এখন বাজে পৌনে তিনটা -কোনায় বেঞ্চে বসে দেখো ওরা কি করছে।
–স্যার
কিছু বলতে গেছিলো পৃথা।
-–নো এক্সকিউজ ,টুডে ইউ জাস্ট অবসার্ভ। আর নেক্সট দিন থেকে–যা বলেছি মনে রাখবে।
চলো,চলো লেটস স্টার্ট ।তারপর ওর সামনে কি কি হয়েছে কিচ্ছুটি মনে নেই পৃথার । যতক্ষণ বসেছিল একটার একটা অনুভুতি ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিলো তার মন- একবার মনে হোল মাটীর সঙ্গে মিশে যেতে – পরে মনে হোল উঠে ঐ লোকটার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলে – শুনুন আপনি একটা দাম্ভিক লোক –আবার কখনও মনে হোল জয়টার কান গুলু জোরে মুচড়ে দিতে কিংবা একটু কাদতে। যদিও কোনটাই করা তার হয়নি । শুধু বসেই ছিল ক্লাসরুমের কোনায় রাখা বেঞ্চে ।ইচ্ছে করেই সে একবারও তাকায় নি রিহার্সালের দিকে – মনে হচ্ছিলো ওটাই তার প্রতিবাদ । চোখ সে একবারই তুলেছিল, হঠাত করে কেউ একজন যখন দৌড়ে ছিটকে প্রায় ছিটকে পড়ছিল তার গায়ের উপর । চমকে চোখ তুলতেই, পড়বি তো পড় একেবারে স্যারের চোখেই – পায়ের কাছে কে যে সরি বলছিল কিছুই মনে নেই ওর । শুধু মনে আছে অন্য কোনে দাঁড়ানো স্যারের চোখ দুটোকে তার অনেক বছর আগে কোন পত্রিকা থেকে আব্বুর দেখানো জঙ্গল দস্যু বীরাপ্পানের ছবির চোখ বলে মনে হয়েছিলো ।
_ কি হোল , কি হচ্ছে এতক্ষণ –আম্মুর গলা ।
তাড়াতাড়ি চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে যখন বেরিয়ে এলো পৃথা –মাজেদা তখন ম্যাগির প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে। (ক্রমশঃ)
*******************************************************************************************************************
একটা জল- ফোয়ারার পাশে বসেছিল শ্যামল । কে যেন পেছন থেকে আলতো হাত ছোঁয়াল । তাকাতে গেছিলো সে, তার আগেই 
হাতটা তার চোখ দুটোকে চেপে ধরেছে- অন্য একটা হাত তার কপালে পড়ে থাকা চুলে বিলি কাটছিল । এ স্পর্শ তার অ-নে-ক চেনা
। হাত সরিয়ে মাধবী তাকে টেনে নিয়ে চলল কাছেরই শাল বাগানটায় ।ও বসতেই মাধবী দৌড়ে গেলো গাছের আড়ালে ।হঠাৎ ই
বৃষ্টি এলো – ওরা তখন একটা মেঠো রাস্তার ধারে সুসজ্জিত কাঁচের ঘরে এক টেবিলের দুই প্রান্তে মুখোমুখি –ও রাস্তার দিকে মুখ
করে-কি যেন বলছিলো মাধবী – বৃষ্টি থেমে গেলো- কথার মাঝখানে তার নাক আর চোখের উপর হাত রেখে কি বলে চলেছে
মাধবী –মাধবীর চোখে চিক চিক কিছু – আবার কি বৃষ্টি নামলো ?কাঁচের দেয়ালের গা বেয়ে ফোঁটা ফোটা জল গড়াচ্ছে –
মাথার পাশেই একটা জোর আওয়াজ। শ্যামল চোখ মেলল । ও কি বেঁচে আছে?
হ্যাঁ- বেজে চলেছে মোবাইলে দেয়া এলার্ম । এক হাতে এলার্মটার অফ বাটনে চাপ দিয়ে বিছানায় পড়ে রইলো সে। আচ্ছা ,স্বপ্ন কি
সত্যি ? মনে এলো বছর খানেক আগে দেখা ক’জন স্বপ্ন বিশেষজ্ঞের কথা । ওরা বলছিল বেড়াল , কুকুর এমনকি পতঙ্গরাও স্বপ্ন
দেখে – মানুষের স্বপ্ন দেখার সময় তার মাথা সজাগ থাকার মতোই সক্রিয় থাকে । বাস্তব আর স্বপ্নের ফারাক কতটুকু ?
লিওনার্দো দ্যা ক্যাপ্রিও’র 'ইন্সেপশন ' ছবিটার কথা মনে এলো- ওখানে স্বপ্নের এমন একটা স্তর দেখানো হয়েছে – যার নাম লিম্বো –
ঐখানে গেলে কেউ আর স্বপ্ন থেকে ফিরে আসেনা – ওখানেই আটকে যায় । শ্যামলের মনে হোল আজ সেও যদি লিম্বো স্টেজ এ
চলে যেতো।
এসব ভাবতে ভাবতেই কখন আটটা বেজে গেছে – আর দরজায় বেল বাজিয়ে দিয়েছে করুণা মাসী । মাসী তার রান্না করে দিয়ে
যায় , প্রয়োজনে ঘর ঝাড়ুও দিয়ে যায় ।সময়ের ব্যপারে এক্কেবারে পাক্কা ।অগত্যা বিছানা ছেড়ে উঠতেই হোল । করুণা যখন রান্নাঘরে
শ্যামল বাথরুমে ব্রাশ হাতে ঢুকতে ঢুকতে বলল –বিকেলে কলেজ থেকে আসতে আজ দেরী হবে, রাতের রান্নাটা আমিই করে নেবো,
তোমাকে আসতে হবে না ।
- ক্যান সার আজকে আপনের বন্ধ নাই?আইজ যে রবিবার ।
তাইতো । তার খেয়ালই ছিল না । আজ রবিবার । কলেজ বন্ধ । বাথরুমের গোল বেসিনের উপরে চৌকোনা আয়নায় নিজের
চেহারাটার দিকে কিছুক্ষণ মৌন হয়ে তাকিয়ে রইলো সে –
-আমনের চা টেবিলে রাখসি – মাসীর গলা।
শ্যামল তখন ভাবছিল আজ সে কি করবে ? (ক্রমশঃ)

Friday, April 13, 2018

আমি এখন / পুনর্জন্ম…

হাসরের মাঠে যখন জেগে উঠলাম
এপোকেলিপ্সের রাতে
ঝলমলে সাদা পোশাকে ইশ্বর বাবু জিগ্যেস করলেন
বাছাধন জানোই তো কোথায় যাবে ?
সোজা চোখ রেখে বললাম
জন্নত,কিংবা হেভেন
নতুবা স্বর্গই সই
নীচে তখন অবিরাম প্রজ্জলিত আগুন,
উপরে অদেখা জন্নত।
তিনি বললেন- “কিতাব পড়োনি ?
জাননা কিছুই ?
যীশু আমি অস্ত্র ধরেছি
আমিই হজরত ভেঙ্গেছি পুতুল
শিব হয়ে করেছি তাণ্ডব
তুমি কি করেছো সব জানা আছে মোর
আপোষ, আপোষ আর আপোষ”।
“মাফ করো খোদা, হে আমার ঈশ্বর
যে কিতাব পড়েছি আমি
তাতে নেই ওসব কথা-
শুধু বলা আছে-
সকলই তোমারই ইচ্ছা ,নিমিত্ত মাত্র আমি
পাতাও নড়ে তোমার ইচ্ছায় হে অন্তর্যামী”।
তিনি আশ্চর্যান্বিত হলেন
তারপর মেঘমন্দ্র সুরে উচ্চারিলেন বানী-।
“কয়ামত কে পেছনো হোল অনির্দিষ্ট কাল
কে বলেছে বাঁচতে হবে হয়ে ভেড়ার পাল?’
তারপর….
এবার আমি রথের চাকা ঠেলছি।

Wednesday, April 4, 2018

খেয়ালি আঁচড়



শহরের কি ফুসফুস আছে? আজ মাইক্রো টিচিং এ কেউ  বোঝাচ্ছিল লিভিং, ননলিভিং অবজেক্ট এর ফারাকসে তখন দুপুরবলছিলো  লিভিং অবজেক্ট এর গ্রোথ আছেমানে ওরা বাড়েতখন বেশ লেগেছিলসন্ধ্যায় যখন রবীন্দ্র ভবন - শিশু উদ্যান চত্বরে গেলাম,চারপাশটা দেখে চমকে উঠলামতাহলে কি শহরটার প্রাণ আছে? সাংবাদিক স্কোয়ার নামাঙ্কিত নতুন জায়গাটা ছেড়ে এক্কেবারে কোনটায় বসলাম

সিগারেট টা ধরিয়ে আকাশের দিকে ধোঁয়া ছাড়তেই দেখলাম - উঁচুতে এক সাদা চুল বুড়ো আমায় চোখ মারছেধোঁয়াটা সরে যেতেই স্পষ্ট হোল ব্যাপারটাকে এফ সি' গ্লো সাইন অনেক উঁচুতে।সামনে বিরাট বাঁশের মাচা লাগানো,আর তাতেই বুড়োর আদ্ধেকটা চোখ ঢাকা পড়ে আছে।নিশ্চিত হয়ে আর একবার টান দিলাম।আবারো বুকের ভেতরে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস আমার ফুসফুস ছেড়ে ছড়িয়ে পড়লো শহরটার চোখে মুখে আর তার বর্ণালী আল্পনা আঁকা বুকে।আবছা ধোঁয়ায় দেখলাম সারি সারি বাইসাইকেল।ছাপা শাড়িতে আমার মা,পাশে ফ্রক পড়া আমার বোনেরা বই মেলামুখী হেঁটে চলেছে আমার মৃত পিতার পেছনে
ঘুড়ির মতো পলকা হাওয়ায় গোত্তা মেরে ধোঁয়া সরে যেতেই বাইসাইকেল উধাও, সামনে শুধু বাইকের সারি- লাল,নীল,মোটা,সিরিঙ্গে।আর হেঁটে চলেছে অনেক অজানা ব্লু জিন্স,ঢোলা ঢালা কুর্তি
কেমন ছমছম করে উঠলো গা' টা।সিগারেটটাকে কেঁচোর মতো থেঁতলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।আবারো কি রন্দেভ্যু? চুলগুলো বা'হাতে পেছনে ঠেলে নিশ্চিত হলাম।তা নয়।কিন্তু সামনের রিকশাওয়ালা, আইসক্রিম ওয়ালা,বাঁশিওয়ালা, আর বাতি চানাচুরদানীর পেছনের লোকটা?ওরা কি অমর? না ক্রায়নাইজেশনে রেখে দেয়া কিছু মানুষ?
পেছন থেকে সঙ্গী সাগরিকা আর সিদ্ধার্থের ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়লো।যেতে হবে। খোঁড়া পায়ে বাইক চালাতে চালাতে ভাবছিলাম- নিশ্চিত শহরটার প্রাণ আছে- ওটা যে বাড়ছে।তাহলে ওরা? সেই রিকশাওয়ালা, আইসক্রিম ওয়ালা,বাঁশিওয়ালা, আর বাতি চানাচুরদানীর পেছনের লোকটা?ওরা কি প্রাণীদেহের সেই অংশ জন্মের পরেও যার বিকাশ গতি চলে বড় ধীর ? মনে মনে ভাবলাম জীববিদ্যা পড়ে দেখতে হবে
4/4/2018