শহরের কি ফুসফুস আছে? আজ মাইক্রো টিচিং এ কেউ বোঝাচ্ছিল লিভিং, ননলিভিং অবজেক্ট এর ফারাক।সে তখন দুপুর।বলছিলো লিভিং অবজেক্ট এর গ্রোথ আছে।মানে ওরা বাড়ে।তখন বেশ লেগেছিল।সন্ধ্যায় যখন রবীন্দ্র ভবন - শিশু উদ্যান চত্বরে গেলাম,চারপাশটা দেখে চমকে উঠলাম।তাহলে কি শহরটার ও প্রাণ আছে? সাংবাদিক স্কোয়ার নামাঙ্কিত নতুন জায়গাটা ছেড়ে এক্কেবারে কোনটায় বসলাম।
সিগারেট টা ধরিয়ে আকাশের দিকে ধোঁয়া ছাড়তেই দেখলাম - উঁচুতে এক সাদা চুল বুড়ো আমায় চোখ মারছে।ধোঁয়াটা সরে যেতেই স্পষ্ট হোল ব্যাপারটা।কে এফ সি'র গ্লো সাইন ।অনেক উঁচুতে।সামনে বিরাট বাঁশের মাচা লাগানো,আর তাতেই বুড়োর আদ্ধেকটা চোখ ঢাকা পড়ে আছে।নিশ্চিত হয়ে আর একবার টান দিলাম।আবারো বুকের ভেতরে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস আমার ফুসফুস ছেড়ে ছড়িয়ে পড়লো শহরটার চোখে মুখে আর তার বর্ণালী আল্পনা আঁকা বুকে।আবছা ধোঁয়ায় দেখলাম সারি সারি বাইসাইকেল।ছাপা শাড়িতে আমার মা,পাশে ফ্রক পড়া আমার বোনেরা বই মেলামুখী হেঁটে চলেছে আমার মৃত পিতার পেছনে ।
ঘুড়ির মতো পলকা হাওয়ায় গোত্তা মেরে ধোঁয়া সরে যেতেই বাইসাইকেল উধাও, সামনে শুধু বাইকের সারি- লাল,নীল,মোটা,সিরিঙ্গে।আর হেঁটে চলেছে অনেক অজানা ব্লু জিন্স,ঢোলা ঢালা কুর্তি ।
কেমন ছমছম করে উঠলো গা' টা।সিগারেটটাকে কেঁচোর মতো থেঁতলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।আবারো কি রন্দেভ্যু? চুলগুলো বা'হাতে পেছনে ঠেলে নিশ্চিত হলাম।তা নয়।কিন্তু সামনের ঐ রিকশাওয়ালা, আইসক্রিম ওয়ালা,বাঁশিওয়ালা, আর বাতি চানাচুরদানীর পেছনের লোকটা?ওরা কি অমর? না ক্রায়নাইজেশনে রেখে দেয়া কিছু মানুষ?
পেছন থেকে সঙ্গী সাগরিকা আর সিদ্ধার্থের ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়লো।যেতে হবে। খোঁড়া পায়ে বাইক চালাতে চালাতে ভাবছিলাম- নিশ্চিত শহরটার প্রাণ আছে- ওটা যে বাড়ছে।তাহলে ওরা? সেই রিকশাওয়ালা, আইসক্রিম ওয়ালা,বাঁশিওয়ালা, আর বাতি চানাচুরদানীর পেছনের লোকটা?ওরা কি প্রাণীদেহের সেই অংশ জন্মের পরেও যার বিকাশ গতি চলে বড় ধীর ? মনে মনে ভাবলাম জীববিদ্যা পড়ে দেখতে হবে ।
4/4/2018
No comments:
Post a Comment